অর্জুনের গুণাগুন

মাজহারুল ইসলাম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) থেকেঃ অর্জুন গাছের বীজ সংগ্রহ করে স্যাঁতস্যাঁতে ও উর্বর দোআঁশ মাটিতে রোপণ করতে হয়। অর্জুন গাছে বৈশাখ–আষাঢ় মাসে ফুল ফুটে এবং পৌষ–ফাল্গুন মাসে ফল পাকে। তখন বীজ সংগ্রহ করে পলি ব্যাগে চারা উত্তোলন করা যায়। পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা ভালভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। অর্জুনের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা খুবই সহজ। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে পরিপক্ক ফল হতে বীজ সংগ্রহ করা হয়।
বীজ বপনের পূর্বে ৪৮ ঘণ্টা ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। অনুপাতে বীজতলার মাটি ও গোবর দেয়া উত্তম। তাছারা পলিব্যাগে একটি মিশ্রন পূঁতে চারা উৎপাদন করা যায়। নয় মাস বয়সের অঙ্কুরিত চারা বীজতলা বা নার্সারী থেকে সংগ্রহ করে রোপন করা হয়। উপযোগী আবহাওয়া ও মাটি- বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে অর্জুন গাছ কম-বেশি দেখা যায়। বিশেষত রাস্তার দুপাশে এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর অর্জুন গাছ দেখা যায়। আর্দ ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এ গাছের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সাধারনত দো-আঁশ মাটিতে গাছটি ভালো হয়ে থাকে। বর্ষার শুরুতেই নির্দিষ্ট স্থানে রোপন করতে হয়।
অর্জুন একটি পত্রঝরা মাঝারি ধরনের বৃক্ষ। পরিণত বয়সে একটি গাছ ১০-১৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। গোড়ায় অধিমূল আছে। গাছের কান্ড একধিক ভাঁজ বা স্তর যুক্ত। বাকল পাতলা স্তরে বিভক্ত। পাতা লম্বাটে ৭.৫ – মে সে. মি. ফুল হলুদাগ ও স্পাইক সোজা এবং ফুলের পাপড়ি নাই। ফল লম্বাটে ৫টি ভাজ ও পাখায় বিভক্ত।
অর্জুন গাছের অনেক গুন রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা অনেকেই এই গাছের গুনাবলি জানি না। হৃদরোগ উপশমে অর্জুন ছাল ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাজারে এর অনেক ওষুধ পাওয়া যায়। অর্জুন ছাল ভালভাবে পেষণ করে চিনি ও গরুর দুধের সঙ্গে প্রত্যহ সকালে খেলে হৃদরোগ এবং বুক ধড়ফড় কমে যায়। রক্তে নিম্ন চাপ থাকলে অর্জুনের ছালের রস সেবনে উপকার হয়। রক্তক্ষরণে ৫-৬ গ্রাম ছাল রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে পানি খেলে আরোগ্য লাভ করা যায়। শ্বেত বা রক্ত প্রদরে ছাল ভিজানো পানি আধা চামচ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেলে রোগের উপশন হয়। ক্ষয়কাশে অর্জুনের ছালের গুড়াবাসক পাতার রসে ভিজিয়ে ঘি মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছারা হাঁপানিতে অর্জুন ফল টুকরো করে তামাকের মত ধোঁয়া টানলে উপকার হয়। হার্নিয়াতে অর্জুন ফল কোমরে বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা পাতার রস সেবনে আমাশয় রোগ ভাল হয়।
হৃদপিন্ডের দুর্বলতা ও সাধারণ দুর্বলতায় ৩-৪ গ্রাম অর্জুন ছাল চূর্ণ প্রত্যহ দুবার এক গ্লাস পরিমাণ দুধসহ এক মাস নিয়মিত সেবন করে খাওয়া আবশ্যক। কাচাঁ অর্জুনের ছাল ৫ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে ভালোভাবে পিষে ঠাণ্ডা পানিসহ দিনে দুবার খেলে রক্ত আমাশয়ে বিশেষ উপকারী। ২০ গ্রাম পরিমান আধাচূর্ণ অর্জুন ছাল নিয়ে দুই কেজি পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে জ্বাল করে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেব্য। উল্লিখিত নিয়মে দিনে ২-৩ বার সেবন করে খাওয়া উপকারী। বিচূর্ণ ফল রক্তচাপ কমায়, অর্জুন মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভার সিরোসিস টনিক হিসাবে কাজ করে। বিচূর্ণ ফল রক্তচাপ কমায়, মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভার সিরোসিস টনিক হিসেবে উপযোগী। অর্জুন ছাল মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, এটি মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে। সংকোচন ও জ্বর রোধক হিসেবেও এটা কাজ করে। চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন অনেক ফলপ্রসূ। যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুনের ছালের রসের কোন বিকল্প নাই। অর্জুন খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে অর্জুন।
বিস্তৃতি-ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ অর্জুনের আদি নিবাস। বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। বন কম দেখা গেলেও বিশেষ করে নিচু ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় অর্জুন ভাল জন্মে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ অর্জুন বীজ সংগ্রহ করার সঠিক সময়। প্রতি কেজিতে ৩০০ থেকে ৫০০টি বীজ থাকে। অর্জুন গাছের প্রধানত-ছাল তবে ক্ষেত্রবিশেষে পাতাও ফল।
পরিপক্ক গাছ থেকে ছাল উঠিয়ে (সংগ্রহ করে) ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হয়। অতঃপর ৪-৫ দিন রৌদ্রে শুকিয়ে চটের বস্তায় ভরে শুষ্ক স্থানে রেখে দিলে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং কার্যকারিতা অটুট থাকে। তাছাড়া বীজ পুরোপুরিভাবে পরিপক্ক গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর সংগৃহীত বীজ ভালোভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে রেখে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
অর্জুন গাছের কাঠ খুবই শক্ত। গৃহ নির্মাণ, গরুর গাড়ির চাকা, কৃষি উপকরণ, জলযান, নৌকা, দাড়, মস্তুল, খনি ও নলকূপ খননে ব্যবহৃত হয় অর্জুন কাঠ। বাকল থেকে আহরিত ট্যানিন চামড়াতেও ব্যবহার করা যায়। অর্জুনের বাকল হৃদরোগের ওষুধ, পাতার রস আমাশয় রোগের এবং পাতা তসর উপকারী রেশম পোকার প্রধান খাদ্য।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: