ভোটে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ ইসির

প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৪২ পিএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের (এমপি) কেউ প্রভাব বিস্তার করলে তা নিয়ন্ত্রণসহ গুজব বা অপপ্রচার যাতে না ছড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত ৬১ জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে. (অব.) মো. আহসান হাবিব খান।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে পরে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ বা বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের গুজব বা অপপ্রচার ছড়ায় এবং অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বিশৃংখলা পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করে। আপনারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কোনো গুজবের সন্ধান পেলে বা এরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে আপনারা দ্রুত গুজবকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা জেলা উপজেলা পর্যায়ে সার্বিকভাবে খোঁজ খবরের পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়ায় কোনো গুজব ছড়াচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করবেন।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের দেয়া নীতিমালা অনুসরণ করে খবর সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যম কর্মীরা সারা দেশব্যাপী কর্মরত থাকেন। তারা নির্বাচনী এলাকার এবং বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহ করে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন। তাদের কাজে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করবেন। নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে, সেটাই গণমাধ্যমকর্মীরা তুলে ধরবে সারা দেশের মানুষের কাছে। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের কাজে অযৌক্তিক বাধাপ্রাপ্ত হলে বিভিন্ন মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। বিষয়টির উপর
বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করবেন।

এই কমিশনার আরো বলেন, নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক/বর্তমান মন্ত্রী এমপিসহ নানা মানুষ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচনের সময় অনেকে পেশিশক্তি, অর্থশক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করে। কালো টাকার ব্যবহারে কথাও শোনা যায়। আপনারা চোখ কান খোলা রেখে এই বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়া। যে কোন মূল্যে আমরা একটি অংশগ্রহনমূলক ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। আমরা কোন বিতর্কিত নির্বাচন করে সমোলোচিত হতে চাই না। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদেরকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই নির্বাচনকালীন সময় আপনারা আমাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব আপনাদের উপর। আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা সকলে যেন তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে পালন করে।

তিনি আরো বলেন, কখনো দলীয় মনোভাব পোষন করা যাবেনা বা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবেনা। দায়িত্ব পালনে প্রার্থী, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে।আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কখনো অতি উৎসাহী হয়ে এমন কোন আচরণ করবেন না যাতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

আরেকটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি পূর্ব থেকেই ফৌজদারী বা ক্রিমিনাল মামলা থাকে সেটি ভিন্ন ভাবে আদালতে স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু অযথা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বচ্ছ মনোভাব দেখাতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী বা নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টা ও বিবেচনায় রাখতে হবে।

আহসান হাবিব বলেন, কোনো প্রার্থীর বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার বিষয়টিতে আপনারা অবশ্যই গুরুত্ব দেবেন। এখানে কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত সময়ে নির্বাচন পূর্ববর্তি এবং পরবর্তি সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।

এ বিষয়ে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। আমরা চাই না নির্বাচনকে কেন্দ্র ঐ সব জায়গায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক। সে জন্য আপনারা পূর্ব প্রস্তুতি নেবেন।
অনুষ্ঠানে সকল প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাণয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সকল এসপি-ডিসিসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: