ক্রস কান্ট্রি হাইকিং-এ নতুন ইতিহাস জবি শিক্ষার্থী টনির
সানাউল্লাহ ফাহাদ, জবি থেকে: ‘ওয়াক ফর লাইফ এন্ড আর্থ, স্টপ গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ক্রস কান্ট্রি হাইকিং-এ ভারত বর্ডার থেকে মিয়ানমার বর্ডারে এই প্রথম অভিযান সম্পন্ন করেছেন মাসফিকুল হাসান টনি। তিনি ভোমরা স্থল বন্দর থেকে সাকা হাফং এর পাশে (৩৪৬৫ ফুট প্রায়) পর্যন্ত ট্র্যাকিং করেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী। এই অভিযানে টনি হেঁটেছেন ৬০৭ কিলোমিটার পথ। হাইকিং ফোর্স বাংলাদেশ ক্লাবের আয়োজনে অভিযানটিতে তাকে স্পন্সর করেছে এলবাট্রস, পাওয়ার্ড করেছে এডভেঞ্চার এন্ড আউটডোর্স এবং সাপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।
জানা যায়, ‘সলো ক্রস কান্ট্রি ওয়েফারিং মিশন-২০২২’ শিরোনামে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে হাইকিং শুরু করে ৬ অক্টোবর শেষ করেন মাসফিকুল। এই অভিযানে তাকে পা রাখতে হয়েছে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এবং পার্বত্য অঞ্চলসহ মোট ১৩টি জেলায়। হাইকিং-এ ৬০৭ কিলোমিটার পথের মধ্যে প্রথম ৪৮৪ কি.মি. ছিল সমতম পথ। এতে ৫৪ কি.মি. সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধের রাস্তা। প্রায় ১০০ কি.মি. পাহাড়ি হাইকিং পথ। সর্বশেষ থানচি থেকে সাকা হাফং ভয়াবহ ট্রেকিং ২৩ কি.মি. পথ অতিক্রম করে শেষ হয় এ অভিযানের।
এই রূটে তার দেখা মিলেছে মেঘনা, রূপসা, কিত্তনখোলা, মংলা, বেলাই, বিষখালী, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, আপার ভদ্রা, কালাবদর, ভোলা, যুগীখালী, দড়াটানা ফেনী নদীসহ মোট ২৭ টি নদীর। ৩ টা দীঘি, তেতুলিয়া, জয়মনিসহ বেশ কয়েকটি খাল, বিল, ক্যানেল, প্রত্ন নিদর্শন ও সুন্দরবন।
মাসফিকুল হাসান টনি এ বিষয়ে বলেন, অন্যান্য দেশের মতো আমাদের পর্যটন খাতও এগিয়ে চলেছে। তবে এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। পার্ক কিংবা কৃত্রিম নির্মিত স্পটের তুলনায় আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশি। অনেক গ্রাম ও পর্যটনের উৎস হয়ে উঠতে পারে। পর্যটনের উদ্দেশ্য যখন আমাদের কাছে জ্ঞান আহরণ হয়ে উঠবে ঠিক তখনই আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন হয়ে উঠব। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি।
হাইকিং অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে টনি বলেন, গত ১৬ দিনে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। কখনো ইউনিয়ন পরিষদ কখনও হোটেল, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, কখনো পাহাড়ের গ্রামে রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়। তার সঙ্গে ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ, ভরত রাজার মন্দিরের মতো স্থাপনারও দেখা মিলেছে। সাতক্ষীরার বিখ্যাত চুই ঝাল, গরু ও খাসির মাংস, বাগেরহাটের গলদা চিংড়ী, বরিশালের আমড়া, পিরোজপুরের পেয়ারার স্বাদও নেয়া হয়েছে।তার সঙ্গে পাহাড়ের বাসিন্দাদের নিজস্ব খাবারও বাদ যায়নি। জুমের চালের ভাত, শামুক, বাঁশ কোড়ল, নাপ্পিও তালিকায় ছিল।
অভিযান চ্যালেঞ্জিং ছিল কিনা এমন প্রশ্নোত্তরে টনি বলেন, ধৈর্য্যের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাসের এবং অবশ্যই কৌশলী হওয়া জরুরী। লক্ষ্যে পৌঁছাতে ঘন্টার পরে ঘন্টা রোদে পুড়তে হয়েছে। হুটহাট বৃষ্টিতে ভিজতে হয়ছে। কোমর পর্যন্ত পানির ঝিরিতে দীর্ঘ সময় হাঁটতে হয়েছে। প্রচন্ড স্রোতের রেমাক্রি খাল পাড়ি দিতে হয়েছে এবং শেষ অংশে মধ্যরাত থেকে পিচ্ছিল এবং সরু খাড়া পথ ধরে পাহাড় ট্রাকিং করতে হয়েছে জোঁক কে সঙ্গী করে। দেশের মাটিতে এই ধরনের অভিযানে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত এবং নিজের একটু স্বপ্ন পূরণ হলো। এই অভিযানে অনেক মানুষের সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি। সকলের প্রতি আমি ঋণী এবং কৃতজ্ঞ। সামনে আন্তর্জাতিক অভিযানে অংশ নিবো।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: