প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী-স্ত্রী’র আবেদন: প্রার্থীতা প্রত্যাহারের হুশিয়ারি মোস্তাক চৌধুরীর

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৫০ পিএম

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ে বাঁধা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (সদ্য বহিষ্কৃত) শাহীনুল হক মার্শাল ও তার তিন ভাই- এমনটি দাবী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য খাঁন বাহাদুর মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী নারী সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ। ৬ অক্টোবর জাতীয় সংসদের নিজস্ব প্যাডে কানিজ ফাতেমা ও একই তারিখে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যাডে মোস্তাক আহমদ দলীয় সভানেত্রীর কাছে করা আবেদন দুটি থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আবেদনে বিদ্রোহীপ্রার্থী মার্শাল নির্বাচনী প্রচারণায় অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকা ব্যবহার করছেন বলেও দাবী করে প্রার্থীতা প্রত্যাহারেরও হুশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। তবে, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ পেতে মোস্তাক আহমদ এমনটি করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে করা আবেদনে ১৭ অক্টোবরের অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহিনুল হক মার্শালের পক্ষে ভোট করায় তার তিন ভাই জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কাইসারুল হক জুয়েলের বিরুদ্ধে কঠোরতম সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রার্থী মার্শাল ও তার তিন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। এরমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় মার্শালকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়েছে। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংগঠনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মার্শালের পক্ষে তার তিন ভাই রাশেদ, সোহেল ও জুয়েল সরাসরি ভোট করছেন। তারা তাদের অবৈধ কোটি কোটি কালো টাকা খরচ করে ভোটারদের 'কমিট মেন্ট' আদায় করতে চেষ্টা করছেন।

এছাড়াও মার্শালের বড় ভাই রাশেদ আওয়ামীলীগের একটি অংশকে নিয়ে, মেজ ভাই সোহেল জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন যুবলীগের একটি অংশকে সাথে নিয়ে এবং অপর ভাই জেলা স্বেচ্চাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাইসারুল হক জুয়েল সরাসরি পুরো জেলা জুড়ে মার্শালের পক্ষে ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। এই কারণে জেলা আওয়ামীলীগ পরিবার বিভ্রান্ত ও হতাশ। এরপরও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ একজোট হয়ে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারেরাও পূর্বের মতো শেখ হাসিনার প্রার্থীকে জয়ী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন।

এরপরও প্রার্থী মার্শালের তিন ভাই বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় অত্যন্ত নোংরা ও অশালীন ভাষায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমাকে নিয়ে গালিগালাজ করছে। দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় এই তিন ভাইকে থামানো দরকার।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে শপথ করিয়ে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করছেন মার্শাল। তার পরিবারের সদস্যদের টাকার হিসাব খতিয়ে না দেখলে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবো। তারা ৪ ভাইয়ের নোংরামির বিষয়গুলো আমি লিখিতভাবে দলীয় সভানেত্রীকে জানিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, দলীয় ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে হলে মার্শাল ও তার তিনভাইকে থামাতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ বলেন, আমার ও আমার স্বামী মোস্তাক আহমদের আবেদনের বিষয় একই। তবে আমরা আলাদাভাবে আবেদন করেছি।

অন্যদিকে এসব অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মার্শাল বলেন, আচরণবিধি আমি নয় লঙ্গন করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তার প্রচারনায় সংসদ সদস্যরাও অংশ নেন।

অস্ত্র এবং টাকার বিষয়ে মার্শাল বলেন, আমাকে যে বাজেট দেওয়া হয়েছে সে বাজেটের মধ্যেই আমি খরচ করছি। আমি যেহেতু সরকারকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দেই তাই সরকার আমাকে লাইসেন্সধারী বন্দুক দিয়েছে। ৯ উপজেলায় প্রচারণার সময় এটা আমার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করছি।

মার্শালের ছোট ভাই ও কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, ইতিমধ্যে মোস্তাক আহমদকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন ভোটাররা। নিজের পরাজয় দেখতে পেয়ে বাজে প্রলাপ বকছেন তিনি। পরাজয় ঠেকাতেই কালো টাকা ও অবৈধ অস্ত্রের কথা বলে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নয়। এটা স্থানীয় নির্বাচন, এখানে সমর্থন রয়েছে আওয়ামী লীগের কিন্তু প্রতীক নেই।

একইভাবে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শাহীনুল হক মার্শালের পক্ষে কক্সবাজার জেলা যুবলীগ সভাপতি-সম্পাদক ভোট করার কথা উল্লেখ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একই ভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও সাংসদ কানিজ ফাতেমা আহমদ।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন আমরা সবই করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রের দাবি, বঙ্গবন্ধু আমলে ১৯৭০ এর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন একেএম মোজাম্মেল হক। তখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাত্র ২৫ বছর বয়সে নির্বাচনে লড়ে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি হয়ে থাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মোস্তাক আহমদ চৌধুরী। নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে দেখতে কক্সবাজার এসেছিলেন এবং তাকে আওয়ামী লীগের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। এটাকে মোজাম্মেল হককে অসম্মান হিসেবেই গণ্য করেন তার পরিবারের সদস্যরা। এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোজাম্মেল হকের ছেলে মার্শাল চেয়ারম্যান হিসেবে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে পিতাকে হারানোর প্রতিশোধ নিবেন। তবে, বিষয়টি সরাসরি মুখ না খুললেও নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রয়াত মোজাম্মেল হকের ছোট ছেলে জুয়েল।

এবারের কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চারজন চেয়ারম্যান, নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনের ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: