ফাইনাল পরিক্ষা স্থগিত থাকায় কুবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৫ এএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে বন্ধ ক্যাম্পাসে বিবাদমান দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রের মহড়ায় ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সভায় ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ দিন সকল পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন ক্যাম্পাস শান্ত থাকার পরেও কেন প্রশাসন পরিক্ষা শুরু করছেন না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, ২ অক্টোবরের ঘটনায় ক্যাম্পাসে অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পরে প্রশাসন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরিক্ষা স্থগিত রাখেন। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

এর আগে, কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ২ দিন বন্ধ রাখে সকল পরীক্ষা। এতে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে দায় এড়িয়ে গেছেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ৮দিনে বিভিন্ন বিভাগের ২৭টি সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। যার মধ্যে স্নাতকের ২৪টি ও স্নাতকোত্তরের ৩টি ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে। গত মাসেও ২দিনে ৯টি সেমিষ্টার পরীক্ষা স্থগিত ছিল। এছাড়াও এসময়ে ইনকোর্স পরীক্ষাগুলো বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।

ফলে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে নিজেদের ব্যার্থতায় পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এবং প্রশাসন চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট করে বলেন, অনার্স এর ৪ বছর পার হয়ে গেছে। আমি আছি মাত্র ৭ম সেমিস্টারে। ৭ম সেমিস্টারের পরীক্ষার ডেইট হলেও এখন পরীক্ষা আর হচ্ছে না। এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত করলো প্রশাসন, কিন্তু সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। এমতাবস্থায় আর আমি কবে পড়াশুনা শেষ করতে পারবো এটা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বলেন, প্রশাসন অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে সকল ধরণের সেমিস্টার স্থগিত করেছেন। কিন্তু এখন ক্যম্পাসে কোন ধরণের অরাজকতা বা অস্থিতিশীলতা নেই। তাও কেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না। এখন প্রশাসনের উচিত খুব দ্রুত পরীক্ষা শুরু করা। এমনি করোনার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। প্রশাসনের এই গা ছাড়া ভাব আমাদের ক্যারিয়ার এর উপর প্রভাব পড়তেছে।

একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এভাবে পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে। প্রশাসন নাম মাত্র একটা কমিটি গঠন করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। আইন প্রয়োগ ও শাস্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। এটার জন্য আমাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।’

এদিকে ছাত্রলীগের এসকল সংঘর্ষ এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অস্ত্রের মহড়ায় সরাসরি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ২ অক্টোবর তারিখে ''প্রক্টরের উপস্থিতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া'' এ বিষয়ে গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হয়।

যদিও এ অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, মামলা হওয়ার পর তদন্ত হলে বুঝা যাবে কারা বহিরাগত। তারপর আমরা ব্যবস্থা নিব। ইন্দনের বিষয়ে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকে নিয়ে আসেন আমি তাদের সাথে কথা বলবো।

এর আগে ২ হলের মারামারিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। এতে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রক্টরিয়াল টিমের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, প্রক্টর সেখানে উপস্থিত থেকেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তিনি এই সংঘর্ষকে বিভিন্নভাবে উস্কে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘৪ মাসে সেমিষ্টার হওয়াতে শিক্ষার্থীদের এমনিতেই এত পড়াশোনার চাপে থাকতে হয়। সেখানে আবার তারা রাজনীতিও করতেছে। সেটা ঠিক আছে কিন্তু তারা তো আবার মারামারি করে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট করতেছে। তাদের জন্য শত শত শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায়, এমনটা হচ্ছে।’

উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এসব প্রশাসনিক সিদ্বান্ত। এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় ভাল বলতে পারবেন। আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনেরর দপ্তরে গেলে তিনি প্রতিনিধির সাথে কথা বলেন নাই। পরর্বতীতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিনিধির কল রিসিভ করেননি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: