পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০৮:১০ পিএম

পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা আবু তোয়বুর রহমান ৫২ ভোটের ব্যবধানে হেরে যায়।

গত ১৭ অক্টোবর সেই নির্বাচনে বিশিষ্ট দানবীর পঞ্চগড় চেম্বারের সভাপতি রড সিমেন্ট সার এবং মোটরসাইকেল শোরুম ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান শেখ ২৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পরপরই আওয়ামী লীগ ও সাধারন মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আওয়ামীলীগ কর্মীরা এর কারন খুঁজতে থাকে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয়ের কারন জানাতে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামীলীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলন করেন। শুক্রবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আবু তোয়বুর রহমান পরাজয়ের কারন হিসেবে আবু বক্কর সিদ্দিক জানায়, এখানে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করেছে আওয়ামীলীগ, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন এবং সাধারন সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের অনুসারিরা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছিল। সিদ্দিক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম সুজন (রেলপথমন্ত্রী) ও সাধারণ সম্পাদক সম্রাট এবং তাদের যে অনুসারিরা আছে বিগত নির্বাচনে (২০১৬ সালে) তারা আমাকে পরাজিত করেছিল। সেই সময়ে তারা বলেছিল পঞ্চগড়ে শেখ হাসিনা লীগ নয় সুজন লীগ চলে। ঠিকই একই কায়দায় এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু তোয়বুর রহমানকে পরাজিত করেছে। পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারের কারণ আওয়ামী লীগই।

তিনি বলেন, আমরা টাকার কাছে হেরেছি। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকে দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু তোয়বুর রহমানের মোটরসাইকেল মার্কার পক্ষে এবং রাতে জেলা চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নান শেখের চশমা মার্কার হয়ে কাজ করেছেন। টাকার কাছে তারা বিক্রি হয়েছেন।

পরাজয়ের কারন হিসেবে পঞ্চগড় পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি তারেক ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজনের চাচাতো ভাই ও ময়দানদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জব্বার ও সুজনের ভাতিজা প্রকাশ্যে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। মন্ত্রীর ভাই ময়দানদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার প্রকাশ্যে চশমা প্রতিকের নির্বাচন করেছেন। অন্যরাও দিনের বেলা মোটরসাইকেল ও রাতের বেলা চশমা প্রতিকের প্রচারণা করেছেন। দেবীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমুও একই কাজ করেছেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হওয়ায় ভোটের দিন সব উপজেলায় যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। কিন্তু আমি নির্বাচনের গেটে কাউকে বলতে শুনি নাই মোটরসাইকেল মার্কায় একটি ভোট দেন। এই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আমি অন্য কোন বিরোধী দলকে দুষবো না। এই নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ আমাদের আওয়ামীলীগ।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হয়েছে তারাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতা করেছে। এর মধ্যে মাগুড়ার জোতিষ, গড়িনাবাড়ির দিপুও ছিল। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এখনো অনুমোদন পায়নি। তাই দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ এ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করবেন।

সিদ্দিক বলেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হেরে যাওয়ায় এর প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পড়তে পারে। এজন্য এসব নেতাদের যেন মনোনয়ন না দিতে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করে তিনি আরও বলেন, এদের মনোনয়ন দিলে নৌকা জিতবে না। এদের বাইরে নতুন কাউকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যেমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, আমি একা কোথাও যাইনি। নির্বাচন প্রচারাভিযানে আমি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়েছি। সেখানে মোটরসাইকেল প্রতিকে ভোট দিতে অনুরোধ করেছি। প্রার্থীর নিজ ইউনিয়ন পরিষদেও আমি গিয়েছি। এসময় প্রার্থীর সঙ্গে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কথা বলায় দিয়েছি। আমি দিনে মোটরসাইকেল রাতে চশমার প্রচার করেছি এমন একটা প্রমাণ দেখাক। চেয়ারম্যান মেম্বারদের যেভাবে খুশি করার দরকার ছিল প্রার্থী এতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রার্থী যদি আরেকটু সিরিয়াস হতো তাহলে ্আমরা এই নির্বাচনে জয়ী হতে পারতাম। জেলা আওয়ামীলীগের বিগত কাউন্সিলে তারা দুই ভাই সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। কাউন্সিলে সভাপতি হতে না পেরে জেলা পরিষদ নির্বাচনটাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন। আমরা পক্ষে ছিলাম বলেই প্রার্থী অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: