ধনী হতে ইউটিউব দেখে জাল টাকা তৈরি করতো তারা

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২০ পিএম

সম্প্রতি জাল নোট তৈরি চক্রের  মূলহোতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৪)। গতকাল শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর চকবাজার, সিরাজগঞ্জ সদর এবং খুলনার খালিশপুর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মুলত  ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল ঘেটে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান নিয়ে জাল নোট তৈরি করছিল চক্রটি। আজ রবিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে চারজনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান।

গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিরা হলেন - মো. মাউন হোসেন সাব্বির, মো. পারভেজ, মো. তারেক ও মো. শিহাব উদ্দিন। র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, তারা বিভিন্ন সময়ে জমানো অর্থ দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনে। বয়স তখনো ১৮ পার হয়নি, এর আগেই তারা নামে জাল মুদ্রার কারবারে। তবে কারবার শুরু করার দেড় বছরের মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন তারা। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টার, ১টি পেনড্রাইভ, এন্টি কাটার ১টি, টাকার পাঞ্চিং ১ রোল, জিলেটিং ৫০০ গ্রাম, প্রিন্টারে ব্যবহৃত কালির খালি বোতল ১২টি, গালা ৫০০ গ্রাম, স্পিরিট ৬ বোতল ওফেবিকল আঠা ৬ বোতলসহ জালনোট তৈরির বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

র‍্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, অভিযুক্তরা পরষ্পর যোগসাজশে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করত। এছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা নিজেরাও বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং দোকান, মাছের আড়ৎসহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় জাল নোট ব্যবহার করে। চক্রটির অন্যতম হোতা মাউন হোসেন সাব্বির এবং এই চক্রের সঙ্গে আরও ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তারা কম সময়ে অল্প পুঁজিতে ধনী হওয়ার জন্য এই প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেকমান্ডার মঈন বলেন, ইউটিউব এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এই ধরনের জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি তারা আকৃষ্ট হয়। চক্রের অন্যতম হোতা সাব্বির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে পরিচালিত একটি গ্রুপ ‘‘জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোষ্ট’’ এর মাধ্যমে গ্রেপ্তার অপর সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

এর পর সে জাল নোটের খুচরা ব্যবসা করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপর একটি জাল নোট তৈরি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চক্রটির কাছ থেকে সে তিন লাখ টাকার জাল নোট কেনার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে ৩৫ হাজার টাকা পাঠায়। জাল নোট ক্রয়ের জন্য সে অর্থ প্রদান করলেও চক্রটি তাকে কোনো জাল নোট প্রদান করেনি। চক্রটির কাছ থেকে সে জাল নোট না পেয়ে নিজেই জাল নোট তৈরির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা প্রথমে মেসেঞ্জারে X-MAN নামে একটি গ্রুপ খুলে জাল টাকা তৈরি-ব্যবসার বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করে। এই গ্রুপের আ্যডমিন হিসেবে শিহাব কাজ করত। শিহাবের মাধ্যমে গ্রেপ্তার অপর দুই সদস্য পারভেজ এবং তারেকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সে ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল ঘেটে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে এবং বিভিন্ন সময়ে জমানো অর্থ দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় করত।আর সাব্বির জালনোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় সবকিছু সে নিজেই পরিচালনা করত। যখন জাল নোটের ব্যবসা রমরমা থাকে তখন চক্রটি দৈনিক দুই লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করত। মূলত তারা একটি অভিনব কায়দায় জাল নোটগুলো বিক্রি করত। তারা তাদের আগের ফেসবুক গ্রুপ ‘‘জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোষ্ট’’ থেকে কমেন্টস দেখে তাদের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লাইন্ট তৈরি করে জাল টাকার ব্যবসা করত। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চক্রের সদস্যেদের মাধ্যমে ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ, খুলনা, যশোর এলাকায় সরবরাহ করত। তারা কখনো সরাসরি জাল নোটগুলো ক্লাইন্টকে দেখাত না।

র‍্যাব সূত্রে আরো জানা যায়, বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ঢাকায় এসে মিটফোর্ডে তার দুঃসম্পর্কের মামার ওষুধের দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ঢাকাতে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত সাব্বির। সে তার নিজ পেশার আড়ালে জাল নোট তৈরি চক্রটির অন্যতম হোতা হিসেবে প্রায় এক বছর ধরে চক্রটি পরিচালনা করছিল।শিহাব স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রী প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এই চক্রের সঙ্গে সে জড়িত হয়। সে ইউটিউব দেখে জাল নোট প্রিন্ট করার ধারণা নেয়। চক্রটিতে জাল টাকা প্রিন্টিং, কাটিং এবং বান্ডিলিংসহ প্যাকিং এর কাজ করত শিহাব। সে প্রায় এক বছর ধরে এই চক্রটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আর পারভেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে জাল নোট ব্যবসার সংবাদ দেখে জাল টাকার ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে শিহাবের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে সে চক্রটির সঙ্গে জড়িত হয়। সে ইউটিউবে ভিডিও দেখে জাল টাকা তৈরি করা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। চক্রটিতে সে কম্পিউটারে গ্রাফিক্স এর মাধ্যমে জাল নোট তৈরি এবং প্রিন্টিংয়ের কাজ করত। সে প্রায় এক বছর ধরে এই চক্রটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: