রোগী ছদ্মবেশে র‍্যাব, ১৭ বছর পর ধরা ‘খুনি কবিরাজ’

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৬:১৪ পিএম

সাজা থেকে বাঁচতে কবিরাজের ছদ্মবেশে ১৭ বছর পলাতক ছিলেন হেমায়েত নামে এক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তবে এত চেষ্টার পরেও রক্ষা মেলেনি। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানী থেকে তাকে গ্রেপ্তর করে র‌্যাব। এর আগে দীর্ঘদিন থেকে কবিরাজি পেশার আড়ালে প্রতারণা করতেন হেমায়েত ওরফে জাহিদ কবিরাজ। ২০০৮ সালে মিরপুরে থাকতেই প্রতারণা করেন তিনি।

পাঁচ বছর সেখানে অবস্থানের পর জনরোষের মুখে মোহাম্মদপুরের বছিলায় অবস্থান নেন। সেখানেও শুরু প্রতারণা।এমনই একটি প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে রোগীর ছদ্মবেশে হেমায়েত কবিরাজের দরবারে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে তিনি একটি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর মনু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হেমায়েত। গত ১৭ বছর তিনি দেশে ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কবিরাজের ছদ্মবেশে পলাতক জীবনযাপন করেছেন।তিনি বলেন, ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে বাগেরহাট জেলার সদর এলাকায় মনু বেগম নামে এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০০৯ সালে ওই হত্যাকাণ্ডে হেমায়েতকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

হেমায়েত র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তিনি ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে কবিরাজি পেশা শুরু করেন। কবিরাজির পেশার মাধ্যমে নানাভাবে মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করতেন।নারীরাই ছিল তার প্রতারণার মূল টার্গেট। ২০০৩ সালে তিনি তার স্ত্রী সন্তানসহ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটে এসে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন। কবিরাজি পেশায় তার অন্যতম সহযোগী ছিল হত্যা মামলার অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোবহান।

এসময় অভিযুক্ত হেমায়েত খানের কাছে বিভিন্ন ধরনের আংটি, শঙ্খ, চেরাগ, ক্রেস্ট, কবিরাজি সংক্রান্ত বই পাওয়া জুকএই সোবহানই মনুকে হেমায়েতের কাছে এনেছিলেন চিকিৎসার জন্য। মনুর কাছে থাকা টাকা-পয়সায় নজর পড়েছিল হেমায়েতের। সে মোতাবেক পরিকল্পনা করে মনুকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দলিলপত্রে টিপসই নেওয়ার চেষ্টা করে হেমায়েত ও সোবহান।

এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে হেমায়েত মনুকে কুপিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত গলা কেটে হত্যা করে লাশ ধান ক্ষেতে লুকিয়ে রাখে।এ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে হেঁটে অবৈধভাবে ভারত যায় হেমায়েত। আজমীর শরীফে ৩ বছর থাকার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। লম্বা চুল ও দাড়িওয়ালা ছবি ব্যবহার করে, আসল নাম ও স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে জাহিদুল ইসলাম ছদ্মনাম ব্যবহারে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।

পরবর্তী মিরপুরে প্রতারণা করে বিগত ৫ বছর তিনি মোহাম্মদপুর বছিলায় বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছিলেন। ২০১২ সালে দারুস সালাম থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে সে তার কবিরাজি কাজে ব্যবহৃত কষ্টি পাথরের মূর্তি রাখার দায়ে চোরাকারবারী হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর দেড়মাস কারাভোগ করেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: