সোনাগাজির ইউপি চেয়ারম্যান'র বদৌলতে ২০ মাদককারবারি পেল নতুন জীবন

প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৬ পিএম

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী থেকে: বেকারত্বের রোষানলে পড়ে অথবা সঙ্গদোষ, অধিক লোভ প্রভৃতি কারনে সোনাগাজি উপজেলার মঙ্গলকান্ধি গ্রামে ২০ মাদকবিক্রেতা তাদের পেশা হতে ফিরে এসে বর্তমানে সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনের সুখ উপভোগ করছে।

পুলিশের ভয়ে নির্ঘুমরাত,দিনে আত্নগোপনে থাকা,পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফেরারী জীবন, মামলার হাজিরা দিতে কোর্ট এবং আইনজীবীর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা সহ প্রভৃতি কারনে এদের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। ফেরারির মত খেয়ে না খেয়ে বসবাস করত।দিনের আলো ও লোকমুখর পরিবেশ ছেড়ে তারা পলাতক জীবনযাপন করত।

মঙ্গলকান্ধির ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় মাদকের কারবার ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে বিভিন্ন বয়সের অন্তত ২০ জন। তারা এখন কৃষি, ব্যবসা ও দিনমজুরসহ নানা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর পথে যে ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি হলেন মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল।প্রথমবার চেয়ারম্যান থাকাকালে মাদক কারবারিদের মাদক ব্যবসা ও সেবন থেকে ফিরিয়ে আনতে পুরোপুরি সফল হননি মোশাররফ হোসেন। তারপরও নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষায় চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তার ইউনিয়নের মাদক কারবারিদের একে একে খবর দিয়ে এমনকি তাদের বাড়িতে গিয়ে মাদক ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। এতেও কাজ না হওয়ায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাতেনাতে ধরে মাদক কারবারিদের পুলিশ হাতে তুলে দেন।

গ্রেফতার হওয়া মাদক কারবারিরা কখনো জামিনে বের হলে তাদের খোঁজখবর রাখতেন ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন। এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের বাড়িতে যেতেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতা ও কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিতেন। কখনো ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। এভাবে ২০ মাদক কারবারিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।

মাদক থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ব্যক্তিরা হলেন- মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মঙ্গলকান্দি গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মোমিনুল হক, আইয়ুব আলীর ছেলে লাতু, মকবুল আহমেদের ছেলে ইব্রাহিম, মখলেছুর রহমানের ছেলে দুলাল, সাইদুল হকের ছেলে আইয়ুব আলী, সত্যবান দাসের ছেলে হরিদাস, মাখন দাসের ছেলে মনোনন্দ দাস, খুরশিদ আলমের ছেলে জামসেদ আলম, নুরুল হকের ছেলে সুমন, সাজু মিয়ার ছেলে সুজন, হুদা মিয়ার ছেলে মাইন উদ্দিন, রবিউল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর, আহসান উল্লার ছেলে ইকবাল হোসেন, আনিসুল হকের ছেলে আরমান, একই ইউনিয়নের আইয়ুব খাঁন, মোমিনুল হক, আনোয়ার হোসেন রিয়াদ, কাউসার প্রমুখ।

মাদক থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা রুহুল আমিন বিডি২৪লাইভ কে জানান ‘আমি যখন মাদক কারবারির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তখন সবসময় আতঙ্কে থাকতে হতো। সবসময় নিজেকে অপরাধী মনে হতো। পুলিশ দেখলে ভয় লাগতো। বাদল চেয়ারম্যানের উৎসাহে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর এখন আর সেই ভয় লাগে না।’

মঙ্গলকান্দি গ্রামের দুলাল বলেন, ‘খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। কয়েক বছরে আট মামলার আসামি হয়েছি। প্রতি মাসে আটদিন কোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। বাদল চেয়ারম্যানের উৎসাহে এ পথ থেকে ফিরে এসেছি।’

মির্জাপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘সঙ্গ দোষে একসময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ি। মামলায় পড়ে পরিবারের কাছে অপরাধী বনে গেছি। এখন সবসময় নিজেকে অপরাধী মনে হয়।’

হরিদাস নামের আরেকজন বলেন, ‘মাদকসহ ধরা পড়ে জেলে গেছি। তখন পরিবার-পরিজনের কষ্টের সীমা ছিল না। জেল থেকে বের হয়ে শপথ করেছি আর মাদকের পিছে ঘুরবো না। বাদল চেয়ারম্যানের উৎসাহে এখন জালের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি।’

মঙ্গলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী লাতু। তিনি বলেন, ‘অতিলোভ করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে মামলা হামলার শিকার হতে হয়েছে বহুবার। পুলিশ আমাকে ধরতে না পেরে স্ত্রী, ছেলেদের মামলা দিয়ে জেলে দিয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল পুলিশ- লোকজন দিয়ে বাড়ির আশপাশে পাহারা বসাতেন। এতে হয়রানির শিকার হতে হতো। মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান এসে মাদক ব্যবসা থেকে ফিরিয়ে আসতে নানা প্রলোভন দেখাতেন। তাই এ পথ থেকে ফিরে এসেছি। এখন আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।’

ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ঝুঁকি নিয়ে হলেও একে একে মাদকসহ তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। জামিনে বের হলে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। এভাবে নানাভাবে বুঝিয়ে তাদের সঠিক পথে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ হোসেন বলেন, আমরা সোনাগাজীতে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি। প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি।

ফেনী জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক জানান, মাদক ব্যবসা ছেড়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে এসেছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি যারা সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি নিজ উদ্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক কারবারিদের পাকড়াও করে মামলা দিয়ে, নানাভাবে বুঝিয়ে সঠিক পথে ফেরাতে পেরেছেন। এখনো তার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: