আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর উপকারভোগীদের বদলে যাওয়া জীবনের গল্প

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৬ এএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, এ এক বদলে যাওয়া জীবনের গল্প। "আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার" এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে দেশের ৬৪ টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই শতক জমির মালিকানা সহ সেমিপাকা দুই রুমের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ, আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা রয়েছে।

ভূমিহীন ও গৃহহীন যে কোন বয়সের মানুষই এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধী, বিধবা, প্রবীণ ও স্বামী পরিত্যক্তদের অসহায়ত্বের বিষয়টি বিবেচনায় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অর্জনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে তিনটি ধাপে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ২৩৩টি বাড়ি উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বিতরণ করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় তিনটি ধাপে ৬৫৮ টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়িগুলোতে এখন উপকারভোগীরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। যাদের ঠিকানা ছিল না, তাঁরা নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা পেয়েছে। বাড়ি পাওয়ার পর থেকেই কেউ বাড়ির মধ্যে মোদি দোকান, কেউবা চায়ের দোকান, কেউবা গরুর-ছাগলের খামার, সেলাই মেশিন আর কেউবা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিয়েছে।

কথা হয় গোঙলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী তসলিমা বেগমের সাথে, 'তিনি বলেন ১৩ বছর আগে সংসার করার পরে তিন বছর ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামী ছাড়া এখন চলছি। আগে বাপের বাড়িতে ছিলাম। বহু কষ্টে দুই সন্তানকে নিয়ে দিন যাপন করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়িতে এসে ৩'শ টাকা নিয়ে একটি মুদি দোকান দিয়ে ভালই চালাচ্ছি। যদি এ বাড়িটি না পেতাম তাহলে হয়তোবা এই স্বপ্ন আমি কখনো বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। জীবনে কখনো কল্পনা করতে পারেনি যে একটা এত সুন্দর পাঁকা বাড়ি পাব। তা আবার কোন টাকা ছাড়া। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনাকে আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই।'

একই এলাকার আরও এক উপকারভোগী সুফন বেগম জানান, 'নয়াদিয়াড়ী গ্রামে রাস্তার ধারে ভাঙ্গা ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছুনু। এখন একটা পাঁকা বাড়ি পেয়েছি। আমার স্বামীটা তেমন খাটতে-খুটতে পারে না। তাই বাড়ির ভেতরে বাগুন লাগিয়েছি আর আশেপাশে নানা ধরনের শাক-সবজি লাগিয়েছি। নিজেও খায়, বাহিরেও বিক্রি করি। নিজের স্বামী, ছেলে-পিলে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু শেখ হাসিনার জন্য। তাই তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবো।'

গোমস্তাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী মোসা. পপি বেগম জানান, আমার স্বামী একজন ফেরিওয়ালা। হাটবাজারে পেয়ারা বিক্রি করে। দিন আনে দিন খায়। আমার স্বামীর এমন কষ্ট দেখে, স্বামীর সাথে নিজের সংসারে আমিও হাল ধরেছি। আমার একটা ঘোড়া আছে। সেই ঘোড়াতে ঘান দিয়ে তেল তৈরি করে বিক্রি করি। তার পাশাপাশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করি। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করি। বাড়ির তরকারি বেশিরভাগ কিনে খেতে হয় না। কারণ বাড়ির আঙিনায় যে সবজি চাষ করছি। তা দিয়েই চলে আমাদের। আর এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে একটা পাঁকা বাড়ি পাওয়ার জন্য। তাই শেখ হাসিনার জন্য আমি দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে খুব ভালো রাখেন।

বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর মৌজার উপকারভোগী মোসা. মুসলেমা বেগম জানান, আগে নামো কাঞ্চনতলায় রাস্তার ধারে পরের জমিতে একটা ছাপড়া ঘরে বাস করতাম। আমার দুইটি মেয়ে ও একটি ছেলে। ওখান থেকে আলমপুরের সরকারি বাড়িতে এসে আমার সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েটিরও বিয়ে দিতে পেরেছি। আমার স্বামী বাইরে খাটে। আমিও একটি কোম্পানিতে কাজ করি। আল্লাহর রহমতে এখন খুব ভালোই আছি। আর এটা এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়েছে। এই বাড়ি পাওয়ার জন্য। আমার মত অনেকের‌ ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে এই বাড়িগুলো পেয়ে। এক বেলা না খেয়ে থাকলে তেমন কষ্ট অনুভব হয় না। অন্যের জমিতে যখন ছিলাম তখন খুব চিন্তায় থাকতাম। এখন আর চিন্তা করি না।

আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোসা. আসমা খাতুন এ প্রতিবেদককে জানান, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার-আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করায় তারা যেমন মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছে। ঠিক তেমনি পেয়েছে নতুন এক ঠিকানা। তাদের বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা, পানি নিষ্কাশনেরও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকের বেকারত্ব দূর হয়েছে, ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে, সমাজে নতুন করে পরিচিত হচ্ছে তারা। তাদের জীবনাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তারা। উপজেলা প্রশাসন, গোমস্তাপুর ও আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: