কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা কিশোরী’র
নুর-ই আলম সিদ্দিক, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) থেকে: অসহায় ও নিগৃহিত এক কিশোরী জয়তুন খাতুন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। বয়স অল্প হলেও বাল্যবিয়ের পিড়িতে বসতে হবে তাকে। তার চোখে যখন বড় হবার স্বপ্ন তাড়া করে তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাবা-মা। নেশাগ্রস্থ বাবার অত্যাচার, নির্যাতন আর মায়ের পরকিয়ার বলির শিকার সে। শুধু তাই নয় মায়ের পরকিয়ায় সৎ বাবার কু-নজর আর অত্যাচারেরও শিকার সে। অবশেষে সব প্রতিবন্ধকতা রুখে দিতে তার পাশে দাঁড়ায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্প। ওই ক্লাবের শিক্ষক আয়শা আক্তার সুমির হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়ে তার এখন আশ্রয় হয়েছে ৭৫ সন্তানের জননী বিলকিছ বানুর আঁচলতলে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ^রীর ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার দুলু মিয়া ও কুলছুম বেগম দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেঝো জয়তুন। সে হাসনাবাদ ইউনিয়নের নরসিংডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণি এবং কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের শিক্ষার্থী। বাবা দুলু মিয়া একজন নেশাগ্রস্থ। মাদক সেবনের দায়ে ৫ মাস ধরে জেল হাজতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মা উম্মে কুলছুম পরকিয়ার মাধ্যমে সেই স্বামীর ঘর ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন দক্ষিণ ব্যাপারীহাট এলাকার পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধকে।
সেখানে বিএস কোয়ার্টারে বসবাস করছেন তারা। জয়তুনও থাকেন সেখানে। কিন্তু তার সৎ বাবা মেনে নিত পারেনি তাকে। জয়তুনের বিয়ে দিতে শুরু হয় অত্যাচার নির্যাতন। লেখাপড়া করে বড় হবার স্বপ্ন থাকলেও সে স্বপ্ন যেনো ধুলোয় মিশে যেতে থাকে জয়তুনের। এত অল্প বয়সে যেনো কলি হয়ে ফোটার আগেই ঝরে পড়বে নিমিষেই। এমন কষ্ট তাড়া করে কিশোরী জয়তুনের কচি মনে। বিষয়টি ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষিকা আয়শা আক্তার সুমিকে জানালে ওই শিক্ষিকা তার মা ও সৎ বাবার সাথে কথা বলেন।
তাদের সাফ কথা তাদের মেয়েকে বিয়ে দেবেন তারা। আর তাতে সম্মতি নেই কিশোরী জয়তুনের। এমনকী এই মা-বাবার কাছেও নিরাপত্তা নেই বলেও জানায় জয়তুন। পরে ওই শিক্ষিকা পরিবারের সাথে কথা বলে জয়তুনকে নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে রাখেন ৪দিন। এরপর জেন্ডার প্রমোটার মমতাজ বেগম, আবু আতা আব্দুল্লাহ ডিফেন্স, সংবাদকর্মী ও আবৃত্তি শিক্ষক হাফিজুর রহমান হৃদয়ের সহযোগিতায় নাগেশ^রী থানায় নিয়ে বিষয়টি অবগত করা হয় অফিসার ইনচার্জ নবীউল হাসানকে। থানার ওই কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে আবারও তার মায়ের কাছেই রাখা হয় জয়তুনকে। তাতেও রেহাই হয়নি জয়তুনের।
পরে গোলাপ খাঁ শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলামকে বলে অবশেষে নাগেশ^রী গোলাপ খাঁ শিশু সদনেই আশ্রয় হয় জয়তুনের। মঙ্গলবার ওই প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম কানুন মেনে ফরম পুরণ করে জয়তুনকে তুলে দেয়া হয় গোলাপ খাঁ শিশু সদনের পরিচালক ৭৫ সন্তানের মা খ্যাত বিলকিছ বানুর হাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি শিক্ষক আয়শা আক্তার।
সুমি, সংবাদকর্মী হাফিজুর রহমান হৃদয়, জয়তুনের মা কুলছুম বেগম, বড় বোন জান্নাতি বেগম এবং ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সব্যসাচি সাহা। এ বিষয়ে আবৃত্তি শিক্ষক আয়শা আক্তার সুমি জানায়, কিশোর কিশোরী ক্লাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যেই এমন একটি ভালো কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অফিসার ইনচার্জ নবীউল হাসান জানান, জয়তুনের নিরাপত্তাসহ যেকোনো প্রয়োজনে থানার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। গোলাপ খাঁ শিুশু সদনের পরিচালক বিলকিছ বানু বলেন, আজ থেকে জয়তুন আমার আরেক সন্তান হিসেবে থাকবে। আমি তাকে মায়ের আদর হে বড় করব ইনশাআল্লাহ।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: