একটি জীবন্ত পোস্টার ও গণতন্ত্রের ফসল

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৬:২৮ পিএম

১৯৮৭ সাল। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ২২টি রাজনৈতিক দল তিনটি জোটের মাধ্যমে যৌথ আন্দোলনে নেমেছিল। দিনটি ছিল ১০ নভেম্বর ১৯৮৭ সাল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি। স্বৈরাচারী এরশাদ সেইদিন সারাদেশে কার্ফু জারি করেছিলেন।

কার্ফু ভেংগে মিছিলের আগে-পিছে ঢাকা সচিবালয়ের কাছে, একটি জীবন্ত পোস্টার আমরা দেখেছিলাম। যা পৃথিবীর সব পোস্টার-ব্যনারকে হার মানিয়েছিল। সেই পোস্টার একটি জীবন্ত মানুষ শহীদ নূর হোসেন, যিনি আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছেন। তার বুকে-পিঠে সাদা কালিতে লেখা ছিল, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগের ধারাবাহিক অন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটেছিল।

স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরের দিন,আমি কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিলাম। মাতৃভূমি বাংলাদেশের মর্ষাদা আমরা নিজেদের রক্তের বিনিময়ে হলেও রক্ষা করবো। যাতে গণতন্ত্রের বিজয়ের ফসল বাংলার মানুষ ভোগ করতে পারে, তার জন্য আগামী দিনের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেবো।

কিছুদিন পর সকল দলের ঐক্যবদ্ধ আন্তরিকতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যাত্রা শুধু হয়েছিল, সাথে বাংলাদেশ থেকে সামরিক সরকারের অবসান ঘটেছিল বটে।

কিন্তু আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সাথে স্বৈরতন্ত্র নিপাতের বজ্রকণ্ঠ ক্রমেই কমজোরি হয়েছে। অন্যদিকে শক্তশালী হয়েছে দেশের আমলা ও সরকারী কর্মচারীরা। যারা সব সময় সরকার পক্ষের লোক, ময়ূরপঙ্খীর মতো ভাব ধারণ করে, মেঘ দেখলেই পেখম তুলে নাচে।
এই বাংলাদেশে নূর হোসেনের মতো এ রকম শহীদ তরুণের অভাব কোনদিন হয়নি। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় রাজনীতির মাঠে গর্ব করে বলেছিলাম, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বা রাজপথের দেওয়ালে রাত জেগে কত না চিকা লিখেছি, অমুকের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না।

কিন্তু দিনের শেষে সন্ধ্যায় কিংবা সকালে আশার সমাধিসৌধে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে হয়, নূর হোসেন, তোমার আত্মদান আমরা বৃথা করে দিয়েছি। তোমাকে দেওয়া কথা আমরা রাখতে পারিনি। কারণ তোমার আত্বত্যাগের পরেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদের হত্যার বিচার হলো না। পক্ষান্তরে এরশাদকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা হয়েছিল।

সকল গণআন্দোলন ও দাবী আদায়ে নূর হোসেনরা আত্মাহুতি দিয়ে সফলতা এনে দেয়। তারপর বেওয়ারিশ লাশ হয়ে রাতের আঁধারে জুরাইন কবরস্থানে মাটি চাপা দেওয়া হয়। বিজয়ের ফসল ভোগ করে দেশের আমলারা অন্যদিকে উপক্ষিত হয় রাজনৈতিক কর্মীরা। তারপরও জাতিকে শুদ্ধ করতে বারবার নূর হোসেনদের জন্ম হবেই।

লেখক: মাহবুবুর রহমান, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: