মহাসড়কের উভয় পাশে গাছ কাটার মহোৎসব

এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে: মহাসড়কের উভয় পাশে গাছ কাটার মহাৎসব চলছে। পুরাতন ও নতুন গাছ কেটেই করা হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সম্প্রসারণের কাজ। এসব গাছ কাটা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। মহাসড়কটির দুই পাশের ২০ হাজারে বেশি গাছ কাটা পড়বে। এসব গাছ নামমাত্র মুল্যে হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সততা এন্টারপ্রাইজ। গতকাল মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সরজমিনে দেখা যাচ্ছে সরকারী ও মালিকানা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাক যোগে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দেখানো হচ্ছে সরকারী মামলার হুমকি। গাছ ব্যাপক হারে কর্তনের ফলে তাতে স্থানীয় পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৬ নভেম্বর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ অংশের বাজার সৈয়দপুর এলাকায় গাছ কাটা শুরু হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার( ৮ নভেম্বর) মিনাজপুর এলাকায় উভয় পাশে পাশের ওই গাছগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়। মেশিনের সাহায্যে এসব গাছ কাটার কাজ চলছে। গাছ কাটা নিয়ে মহাসড়কের মধ্যে হুড়োস্থল কারবার চলছে। বহু বছরের পুরোনো অনেক গাছসহ বিপুলসংখ্যক গাছ কেটে মহাসড়ক সম্প্রসারণের ওই কাজ শুরুর উদ্যোগের খবর জনগনের মধ্যে গত দুইদিনে ছড়িয়ে পড়েছে। গাছ কাটা, না কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। পরিবেশ আন্দোলন বাপা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের চিন্তা ভাবনা করছে।
স্থানীয়রা জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের দু’পাশে লাগানো কড়ই গাছগুলো বিশাল আকার ধারণ করেছে। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মহাসড়কটির সৌন্দর্য বর্ধনেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এসব গাছ। গত গতকাল সকাল থেকে মহাসড়কটির আউশকান্দি-শেরপুর অংশের গাছগুলো কেটে ফেলেন নরসিংদীর সততা এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা বাধা দিলে তাদের জানানো হয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। গত তিন দিনে প্রায় ১৫০/২০০টি গাছ কাটা হয়েছে। জন সাধারনের অভিযোগের পরও থেমে থাকেনি গাছকাটার মহোৎসব। মহাসড়কের দুই পাশে স্থানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ ফুট পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের (সওজ) রেকর্ডীয় জমি আছে। তাই সম্প্রসারণকাজের জন্য গাছ কাটার কোনো প্রয়োজন নেই। সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটি ৩৮ দশমিক ২০০ কিলোমিটার লম্বা। চওড়া ২৪ ফুট। চওড়া বাড়িয়ে ৪০ দশমিক ৩৫ ফুট করার কথা রয়েছে। যশোর শহরের দড়াটানা এলাকা থেকে সম্প্রসারণকাজ শুরু হয়ে তা শেষ হবে বেনাপোলের শূন্য রেখা পর্যন্ত।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মহাসড়কের পাশের বাসিন্ধা ইছা মিয়া, রহিম আলী প্রমূখ বলেন আমাদের মালিকানা জায়গার গাছ জোর করে কেটে নেয়া হচ্ছে। আমরা আপত্তি করলে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। সততার এন্টার প্রাইজের পরিচালক নজরুল ইসলাম মোবাইলে জানান, আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঊভয় পাশের গাছ কাটার অনুমতি পেয়েছি।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিবেন মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এটা আমাদের দায়িত্বে নেই। তিনি বলেন প্রতিটি লট দুই লক্ষ টাকা করে টেন্ডার নিয়েছেন। তিনি শেরপুর থেকে মাধবপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার গাছের কন্টাক্টট পেয়েছি। কত টাকা প্রজেক্ট এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন আমরা কোন মালিকানা গাছ কাটছি না সব সরকারী গাছ কাটছি। আপনি আমাদের দেখা করেন নিউজ করা লাগবে না গাছের হিসাব সব পাবেন।
হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপার) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, পাশে গাছ থাকলে সড়কের ক্ষয়রোধ হয়। রাতে গাছে আলো প্রতিফলিত হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে। আমাদের উন্নয়ন অবশ্যই দরকার, তবে ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা করে।’ মহাসড়কের উন্নয়নের জন্য পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্রসহ সঠিক নিয়ম কানুনের মধ্যে থেকে গাছ কাটতে হবে। যে কোন গাছ কাটা হলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক বিষয় ও স্থানীয় জনগনের সমস্যও দেখতে হবে।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে দেশের তিনটি সড়ক যুক্ত হবে। এর দুটি যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক হয়ে যাবে। এ জন্য মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার সমীক্ষা চলছে। ভবিষ্যতে এটি ছয় লেনে উন্নীত হলে মহাসড়কটির দুপাশের আরও জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকের আলোকে গাছ কেটে মহাসড়কটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে সওজ, হবিগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আপাতত ৬ লেন এর কাজ চলছে। এখন ৪ লেন হচ্ছে। দুই লেন হোক আর ছয় লেন হোক, প্র্যাকটিক্যালি গাছ রেখে মহাসড়কটি সম্প্রসারণ অসম্ভব। তাই গাছ কাটা হচ্ছে। মহাসড়কের জায়গায় যদি কেউ গাছ লাগিয়ে থাকেন সেটা সরকার কেটে নিবে এটা স্বাভাবিক।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: