চুয়াডাঙ্গায় আমন ধানে লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫১ পিএম

মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গায় থেকে: চুয়াডাঙ্গায় আমন ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। দেখে মনে হতে পারে সবুজ ধানের সমুদ্র। অনুক‚ল আবহাওয়া, কৃষকদের পরিশ্রম, যথা সময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এবার আমন ধান চাষের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ জেলার কৃষকরা ও কৃষি বিভাগ। বিগত বছরের চেয়ে এবার ধানের বিক্রয় মূল্যও বেশি পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। এখন জমি থেকে ধান ঘরে তোলার অপেক্ষা করছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুসলে উদ্দিন জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৪ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জিত জমির পরিমাণ ৪৫৮ হেক্টর বেশি। এবার চুয়াডাঙ্গায় উফশি বা ইনব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ১৯৭ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলায়। এ উপজেলায় আবাদকৃত জমির পরিমাণ হলো ১৬ হাজার ৫১২ হেক্টর। এছাড়া দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা গ্রামের কৃষক সরোয়ার ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করি। এবার শুরুতে শ্যালো মেশিন দিয়ে ধানে পানি দিলেও পরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ধানের অনেক উপকার হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। এবার ধানের দামও ভালো পাবো বলে আশাবাদী’।

কালিদাসপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালোই হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজার ভালো, সবকিছু মিলে লোকসান হবে না’।

বেলগাছি গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার তিনবিঘা জমিতে ধানের চাষ। বাস্ট রোগের কারণে ধানের ফলনে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।

আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী জানান, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমন ধান আবাদ হয়েছে। জেলায় আবাদের প্রায় অর্ধেক পরিমান ধান এই উপজেলায় আবাদ হয়েছে। আমন ধান উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষকদের নানাভাবে সহযোগীতা প্রদান করেছি। কৃষকদের সমস্যার সমাধানে সবসময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

এ উপজেলায় উফসি বা ইনব্রিড জাতের ধান হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান বাকি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ধানের ফলন অনেক বেশি। হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৪ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। শুধু আলমডাঙ্গা উপজেলাতেই এবার ৭৫ হাজার টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। কিছু ধান ইতোমধ্যে কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা যে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো তার চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতে বড় ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ খুব বেশি পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া সব দিক থেকেই অনুকুলে ছিলো। বাস্ট রোগ, বাদামি ঘাসফড়িং ও অন্যান্য রোগের ব্যাপারে আমরা সচেতন ছিলাম। আলোর ফাঁদের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই ছিলো। কৃষকদের সকল সমস্যার সমাধানে আমাদের কৃষি বিভাগ সবসময় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা প্রদান করেছে। তাই এবার কৃষকরা ভালো ফলনের মাধ্যমে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশাবাদী’।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: