রহস্যেঘেরা যে মসজিদে নামাজ পড়তে দেখেনি কাউকে

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৫০ পিএম

ইমরান হোসেন, সাতক্ষীরা খেকে: দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী খেশরা ইউনিয়নের অন্তর্গত শাহাজাতপুর গ্রাম। এই গ্রামটি একটি সময়ে জঙ্গল ছিল। এখানে কোন জনবসতি ছিল না। পরবর্তীতে হাপুশাহ্ ও টাপুশাহ্ নামের দুইজন দরবেশের আগমন ঘটে এই উপকূলে।

স্থানীয় প্রবীণ লোকদের ধারণা মতে, এক রাতের মধ্যে এই জঙ্গলে একটি প্রার্থনা স্থলের আবির্ভাব ঘটে। সে সময় হাপুশাহ্ ও টাপুশাহ্ এই প্রার্থনা স্থলে আল্লাহর গুণগান করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের যাতায়াত শুরু হয় সেখানে। হাফসা ও টপুসার নেতৃত্বে এই অঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়।

পরবর্তীতে তাদের নাম অনুসারেই এই জনপদের নাম হয় শাহজাদপুর। শাহা থেকেই শাহজাদপুরের আবির্ভাব হয়। বিদ্যমান স্তম্ভটি চুন-সুরকি ও ছোট ছোট ইটের দ্বারা তৈরি। একটি গম্বুজ, চারটি স্তম্ভ একটি দরজা ও দুইটি জালনার সমন্বয় তৈরি এই প্রার্থনা স্থলটি।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান তাদের বাপ দাদাদের মুখে গল্প শুনেছেন এখানে একসময় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদরের দুই নাতির ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের জীবনী সংশ্লিষ্ট নানা আলোচনা অনুষ্টিত হতো এখানে। তবে বর্তমানে বর্তমান প্রজন্ম বা এর আগের প্রজন্ম বা তার আগের পুরো জন্ম অর্থাৎ বিগত ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের মধ্যে এই স্তম্ভটি ঠিক এভাবেই রয়েছে।

স্থানীয় মুজিবুর রহমান মোড়ল জানান, বাপ দাদা ও তার দাদা বংশ ক্রমে তারা গল্প শুনে এসেছেন এই স্তম্ভটি মাটির নিচ থেকেই আস্তে আস্তে উঠে একটি আকার ধারণ করে। মুখোগল্পে শুনেছি এখানে একটি সময়ে নামাজ কালাম করতো তবে আমরা চোখে কখনো দেখিনি। যে লোকটি এই প্রার্থনা স্থলটি তত্ত্ববেদন করত তিনি মারা গেছেন সেই সময়ে তার কবর এই পাশে রয়েছে কবরটি ১২ থেকে ১৪ হাত লম্বা।

বজলুর রহমান মোড়ল জানান, দাদাদের মুখে গল্প শুনেছি কোন এক সময়ে এখানে খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রিয় নবীর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের নানা ধরনের অনুষ্ঠান এখানে পালিত হতো। পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে একটি কবর রয়েছে যেটি এই স্তম্ভের ইটের সাথে মিলে যায় তাই ধারণা করা হয় সেই সময়ে যে দরবেশেরা এটির দেখভাল করত তাদের কবর এটি।

স্থানীয় বহুদিন মোল জানান, অঞ্চলটি সুন্দরবন এলাকা ও উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলটি একটি দ্বীপ ছিল। সেই সময়ে হাপুরসা ও তাপুসা নামের দুইজন দরবেশ এসে এখানে থাকতে শুরু করে। দাদাদের মুখে গল্প শুনেছি এই দুই ব্যক্তির নামের সংমিশ্রণে এই গ্রামটির নাম হয় শাহজাদপুর গ্রাম।

এই এইভাবে গল্প আকারেই আমরা শুনে এসেছি আমার বাবারাও এভাবে গল্প করে শুনিয়েছে দাদারাও তার বাবাদের কাছ থেকে এই একি গল্প শুনে এসেছে কেউ কখনো এখানে কাউকে প্রার্থনা করতে দেখেনি। যথাযথ সংস্কারের অভাবে এই স্থানটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই স্থানটির যথাযথ পরিচর্যা করলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও এই গল্পটি জমা হয়ে থাকবে।

স্থানীয় সাইদুর রহমান আকাশ নামের এক ব্যক্তি জানান এই স্থলবের কোন ইট যদি কেউ বাড়িতে নিয়ে যায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে স্বপ্নে দেখানো হতো স্থান বিরাট গুলো ফিরিয়ে দিয়ে আসতে যত সময় সে ফিরিয়ে না দিয়ে আসতো তার এই অসুস্থতা ভাব থেকে যেত। তাই ভয়ে ছোট বাচ্চারা থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ এখানকার কোন জিনিস স্পর্শ করে না রাতের বেলা এখানে মানুষ আসতে ভয় পায়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কওসার আলী সরদার জানান, শুনেছি এটি মসজিদ তবে কখনও নামাজ কালাম পড়তে দেখা যায়নি তবে এই স্থানটিতে কোন প্রকার অত্যাচার করা হলে তারা সেটা শাস্তি পেয়ে যায়।

খেশরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওবাইদুর রহমান মিঠু জানান, লোকমুখে গল্প শুনেছি এই মসজিদটি মাটির নিচ থেকে আস্তে আস্তে উঠেছিল তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বলার মত নাই।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় প্রধান আফরোজা খান মিতা জানান, স্থানটির নাম শুনেছি তবে এখনো সেখানে পরিদর্শন করা হয়নি। নামটি তালিকায় রাখলাম পরবর্তীতে কখনো সুযোগ আসলে আস্তে আস্তে কাজ করা হবে এমন স্থান বাংলাদেশে অনেক রয়েছে আমরা চাইলেও একযোগে কাজ করতে পারিনা সুযোগ সুবিধা আসলে সকল স্থানে অল্প অল্প করে কাজ করে এগোতে থাকি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: