রাবিতে ১৫ দিনে সাতটি সাইকেল চুরি: আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে চলছে সাইকেল চুরির মহড়া। একের পর এক সাইকেল চুরির ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ক্যাম্পাস থেকে সাতটি সাইকেল চুরি হয়েছে বলে প্রক্টর অফিস থেকে জানা গেছে। তবে তাদেরকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এ চক্রের সদস্যরা। তারপর সুযোগ বুঝে তালা ভেঙে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান। চক্রের সদস্যদের পিঠে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতো ব্যাগ ঝুলানো থাকে যেন কেউ বুঝতে না পারে তারা চোর। অনেককেই আবার চশমা পরে স্মার্ট লুক নিয়ে সাইকেল চুরি করতে দেখা গেছে।

ভুক্তভোগীদের সাথে বলে জানা গেছে, তাদের সবার সাইকেলগুলো নতুন। দু-তিন মাসের মধ্যে সাইকেল ক্রয় করা হয়েছে এমন সাইকেলগুলো চুরি বেশি হচ্ছে। নতুন সাইকেলগুলোর প্রতি ঝোঁক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদেরকে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অপারগতা রয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

তারা বলছেন, আমরা থানায় অভিযোগ করছি কিন্তু তাতে কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। অভিযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাসে কোনো গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ।

প্রক্টর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী, একজন কর্মচারী ও একজন শিক্ষকের ছেলের সাইকেল চুরি হয়েছে। যে ৫ জন শিক্ষার্থীর সাইকেল চুরি হয়েছে তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অনিল চাকমা, আরবী বিভাগের নূর আলম নেহাল ও ইয়াসির আরাফাত সিফাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আসমাউল ইসলাম এবং গণিত বিভাগের জাহিদ হাসান।

সর্বশেষ গতকাল রোববার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের নিচ তলা থেকে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান।

তিনি জানান, গতকাল সকালে ক্লাস চলাকালীন সময়ে তার সাইকেলটি চুরি হয়েছে। সকাল ১০ থেকে ১২ টা পর্যন্ত সময়ে এমন ঘটনা ঘটে। ক্লাস শেষে সাইকেল নিতে আসলে সাইকেলটি নির্দিষ্ট জায়গায় না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। তারপর প্রশাসনের সহায়তায় সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে দেখা যায় একজন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে এসে সাইকেলের তালা ভেঙে সাইকেলটি নিয়ে যাচ্ছে।

পরিবারের কষ্টে অর্জিত দশ হাজার টাকা দিয়ে নতুন সাইকেল কিনেছিলেন নূর আলম। কে জানতো এই নতুন সাইকেল তার কাল হয়ে দাঁড়াবে। ৮ দিন হলো তার সাইকেলটি চুরি হয়েছে। এখন হতাশায় ভুগছেন এ শিক্ষার্থী।

তার কাছে জানতে চাইলে এক রকম হতাশা হয়েই তিনি বলেন, বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম এবং কিছু টাকা বন্ধু বান্ধবের কাছ ধার নিয়ে সাইকেলটি কিনেছিলাম। কিন্তু মাস খানেক না যেতেই সাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ চ্যাক করে দেখেছি এবং চোরের ছবিও তার কাছে আছে বলে তিনি জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগের পরও কোনো আশ্বাস পাইনি। আমার সাইকেল হারানোর পর আরও ৪টি সাইকেল চুরি হয়েছে। আমি চাই আমার মতো আর কোনো শিক্ষার্থীর সাইকেল না হারাক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক বলেন, চোর ধরার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ থানার পুলিশ প্রশাসনের। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোরকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ভিডিও ও ছবি নিয়ে মতিহার থানায় পাঠাচ্ছি। ইতোমধ্যে দুটো সাইকেলের গ্যারেজ টেন্ডার পাস হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে বসে এ নিয়ে কথা বলবো। আমরা সব সময় এটা নিয়ে তৎপর আছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মতিহার থানার পরিদর্শক আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, আমরা এ চক্রের সদস্যদের ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো নিয়ে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।