লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৬ পিএম

শিশির ভেজা সকাল শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয়। রাত এবং সকালে ঠান্ডা অনুভূত হলেও দুপুরের দিকে খানিকটা গরম অনুভব হয়। একই দিনে দুইরকম আবহাওয়া পাওয়া যায়। শীতের আগমনে প্রথমে এমনটাই হয়ে উঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির এই অদল-বদল খেলায় গ্রামীণ পরিবেশ কিছুটা পূর্ন হয়ে উঠে। শীতের এ আগমনী বার্তায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা।

শীত নিবারণের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে লেপ তোষক বানাতে ক্রেতারাও ভিড় করছে দোকানগুলোতে। অনেকেই আবার ব্যস্ত নিজের পুরনো লেপ-তোষক মেরামতে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। তবে বাংলাদেশে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি দিক থেকেই শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়। তাই শীত মোকাবিলায় আগাম প্রস্ততি হিসাবে ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করে দোকানে মজুদ করে রাখছেন।

দিনে কিছুটা গরম থাকলেও রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ায় শীতের এসব সামগ্রী তৈরি করে নিচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। পরিবারে শীত মোকাবেলায় লেপ তোষকের চাহিদা বেড়ে যায়। শীত মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে বিয়ের ধুম পড়ে যায়। গ্রাম্য সংস্কৃতি অনুযায়ী নতুন কনের সাথে লেপ, তোষক, জাজিম, বালিশ, কোল বালিশসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়ার রেওয়াজ ও রয়েছে অত্র অঞ্চলে। যার ফলে সব মিলিয়ে ব্যস্থ সময় পার করছেন দেওয়ানগঞ্জের কারিগররা। উত্তরাঞ্চলে এ উপজেলা অবস্থিত হওয়ায় শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে তুলনামূলক শীতের প্রভাব বেশী থাকে। শীত মোকাবেলায় আগাম প্রস্ততি হিসেবে লেপ তোষক বানানোর কাজ শুরু হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের তুলনায় এবারের শীতে লেপ-তোষকের চাহিদা কম। তাছাড়াও এই অঞ্চলে এখনো ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই গ্রামাঞ্চল থেকে লেপ-তোষকের চাহিদা তেমন আসছেনা। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে এমনটাই আশা করছেন ব্যবাসায়ীরা।

উপজেলা ও পৌর শহরের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে শীতের আগাম প্রস্তুতির জন্য লেপ-তোষক বানাতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কারিগররাও এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে লেপ–তোষক বানানোর প্রায় শতাধিক কারিগর রয়েছেন। এ বছর একটি লেপ তৈরি করতে ৮শ টাকা থেকে ১৫শত টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তোষক বানাতে খরচ পড়ছে ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে একটি লেপ বা তোষক তৈরিতে একজন কারিগর ১৫০-২০০ টাকা, সিঙ্গেল লেপ ১৫০ টাকা ও ডাবল ২০০ টাকা এবং জাজিম তৈরিতে ৫০০ টাকা করে মজুরি পান।

রহমান ক্লাথ স্টোর এন্ড বোর্ডিং সেন্টার এর স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহমান জানান, একটি লেপ তৈরীতে সময় ব্যায় হয় ২ থেকে ৩ ঘন্টা। আকার ও মানবেদে সিঙ্গেল লেপ ৮০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে এবং ডাবল মান ও প্রকারভেদে ১২০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঝুটের তৈরি সিঙ্গেল তোষকের দাম ৭০০ থেকে শুরু করে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত এবং ডাবল ১১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে কেজি প্রতি শিমুল তুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা।

এবছর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি জিনিসের উপর গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি লাগছে একটি ৬০ থেকে ৭০ কেজি ওজনের জাজিম তৈরি করতে গড়ে সময় প্রয়োজন হয় পাঁচ ঘন্টা। তুলার তৈরি জাজিম সর্বনিম্ন মূল্য তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং নারিকেলের ছোপার তৈরি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে থাকে।

লেপ তৈরি করতে দোকানে এসেছেন উপজেলার বাসিন্দা লামিয়া চৌধুরী কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, শীতকে প্রাধান্য দিয়ে আগেই এসেছেন লেপ তৈরি করাতে। তার ধারণা শীত জেঁকে বসলে কারিগররা আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এজন্য তিনি আগেই এসেছেন লেপ তৈরি করাতে।

উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ পৌর বাজার, কালিতলা বাজার, জাম্বিল বাজার, পূল্ল্যাকান্দি বাজার, ঝালোরচর বাজার, কাঠারবিল বাজার, তারাটিয়া বাজার ও সানন্দবাড়ী বাজার ঘুরে একই অবস্থা দেখা যায়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: