বাঙালির ঐতিহ্যের নবান্ন আয়োজনে মেতেছে রাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০১:৪৫ পিএম

অগ্রহায়ণের শীত-শীত সকালে মাটির চুলায় ঢেঁকিতে ভানা নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে হরেক রকমের পিঠা তৈরি করেন গ্রামের গৃহস্থ ঘরের নারীরা। সেই পিঠা খেয়ে দিন শুরু হয় গ্রামের মানুষ গুলোর। শহরে এ দৃশ্য বেশ অপরিচিত। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল। তবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের উদ্যোগে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, পিঠা খাওয়া, নাচ-গান-আনন্দ-উল্লাস আর ভিন্নধর্মী সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে পালিত হচ্ছে ‘নবান্ন উৎসব ১৪২৯’।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় রঙিন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার আয়োজনটি উদ্বোধন করেন। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি , পিঠা উৎসব, ধান কাটা উৎসব, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কারের আয়োজন করা হয়।

ছবি: প্রতিনিধি

এবারের নবান্ন আয়োজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল পিঠা উৎসব।বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদ প্রাঙ্গণে এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় পিঠা প্রদর্শনী। এই উৎসবে ওই বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ১০ টিরও বেশি স্টল অংশগ্রহণ করে। এতে গ্রাম-বাংলার প্রায় ৫০ রকমের পিঠা প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষি অনুষদ ভবনের সামনে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষর্থীরা। পিঠা উৎসবে ১০টিও বেশি স্টল বসেছে। বাহারি নামের পিঠাগুলো খেতে ভিড় করেছে শিক্ষার্থীরা। স্টলগুলোর নামেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া- ‘মৌচাক পিঠা উৎসব, শাশুড়ি মায়ের দোয়া, চিতই স্পেশাল, পিঠা পার্বণে অরণ্য -১৯, আরশীনগর, নবান্নের পিঠা সরোবর, পিঠাই ঘর, পিঠাপুলি।

ছবি: প্রতিনিধি

স্টল গুলোতে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের গ্রামীন পিঠা। বাহারি নামের পিঠাগুলো খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। পিঠাগুলোর মধ্যে রয়েছে, দুধপুলি পিঠা, চন্দ্র পুলি,সুজির কাটলি বরফি, জামাই পিঠা, চাঁদ পুলি, পাটি সাপটা, গোলাপ ফুল পিঠা, চিকেন ফ্রাই, লবঙ্গ পিঠা, শামুল পিঠা, রুপালি পিঠা, গাজরের হালুয়াম ডিমপুর, গোলাপ, আরশি নগর, ঝাল-মিষ্টি, হৃদয়হরণ পিঠা, পিঠা, সূর্যমুখী, পাকোয়ান পিঠা, শামুক পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসে ভরা সবজি পিঠা, পাটি সাপটা, খিরপুলিসহ প্রায় ৫০ পদের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে এ স্টল গুলোতে।

শাশুড়ি মায়ের দোয়া স্টল বসা এগ্রোনমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার স্টলে ১৩-১৪ রকমের পিঠা আছে। ১০ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত এক একটি পিঠা বিক্রি করা হচ্ছে। দেশীয় ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়াসে তাদের এই মনমুগ্ধকর আয়োজন বলে জানান তিনি।

ছবি: প্রতিনিধি

পিঠা উৎসবে আসা ম্যানেজমেনট বিভাগের তাজ নূর বর্ণ বলেন, এ শীতে মায়ের হাতের পিঠা খুব মিস করছি। ক্যাম্পাসে বসে শীতের পিঠা উৎসবের আয়োজন করার জন্য এগ্রোনমী বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিচ্ছি।

পিঠা উৎসবে আসা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাপতিলা বলেন, এ শীতে মায়ের হাতের পিঠা খুব মিস করছি। ক্যাম্পাসে বসে শীতের পিঠা উৎসবের আয়োজন করার জন্য ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিচ্ছি।

আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি অনুষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম বলেন, নবান্ন উৎসবের কোন নির্দিষ্ট তারিখ নেই। এটি ঋতুনির্ভর। আমরা প্রতিবছর ন্যায় এবারো নবান্ন উৎসব আয়োজন করেছি। আমাদের সকাল থেকে পিঠা উৎসব শুরু হয়েছে। বিকেলে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আমরা বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের এই কাজে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রশাসন সহযোগিতা করে চলেছে। ভবিষ্যতে এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: