জয়পুরহাটে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু, ঘরে ঘরে নবান্নের আমেজ

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৭ পিএম

ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় মুখ ভরা হাসি নিয়ে মহা ধুমধামে মাঠ ঘাটে সোনালী রং ধারণ করা রোপা আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। নতুন ধান কাটা মাড়াই উৎসবের পাশাপাশি চলছে ঘরে ঘরে বাংলার চিরায়ত উৎসব নবান্ন । ক্ষির, শীতের পিঠা পুলি খাওয়ার আয়োজন। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার সর্বত্র এখন কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আমন ধান লাগানোর পরে তেমন কাজ থাকতো না কৃষক ও মজুরদের হাতে। ফলে আশ্বিন-কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে কাজের অভাবে মঙ্গা হিসাবে দেখা দিতো জয়পুরহাটের মানুষের নিকট। চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতো দৈনন্দিন খরচ চালাতে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সরকারের সহযোগিতায় উদ্ভাবন করা হয় ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ বিনা-৭, ১৭, ব্রি ধান-৭৫, ব্রিধান-৯০, হিরা, এ্যারাইজ-৭০০৬, এ্যারাইজ-১৬০১৯, জিরা শাইল, গুটিস্বর্ণা ও কাটারী ভোগ জাতের আমন ধান।

এছাড়াও স্থানীয় মামুন ও রনজিত, পটল পাইরী, চয়ন জাতের ধান স্বল্প সময়ে (৯০ দিন) অল্প খরচে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে। সে কারণে সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে চিরতরে মঙ্গা দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচীর আওতায় প্রায় বছর ব্যাপী ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, হত দরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী হিসাবে ১০ টাকা কেজি চাল, টিসিবি ও ওএমএস সহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে

ফলে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড, হিরা, মামুন, পাইরী, এ্যরাইজ-১৬০১৯, ব্রিধান-৭৫, স্বর্ণ-৫ ও বিনা-৭, ১৭, এ্যারইজ-৭০০৬ জাতের আমন ধান আগাম জাত হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০২১-২০২২ রোপা আমন চাষ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ৬১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, হাইব্রীড জাতের ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর ও স্থানিয় জাতের রয়েছে ৪৫০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন।

জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিএডিসি (বীজ) থেকে উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহ করা হয়। আলু চাষের জন্য এ জেলার কৃষকরা বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে থাকেন। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় শতকরা ৪০ ভাগ ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

পঁচিবিবি উপজেলার কাঁশড়া গ্রামের কৃষক নেহাজ মন্ডল এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার ১৮ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭, ১৭ ও ধানীগোল্ড জাতের ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন, বরইতলী গ্রামের কৃষক আবু সুফিয়ান এবার ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ২০/২২ মন করে ধান পেয়ে খুশি বলে জানান। নতুন ধান বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে।

পুরানাপৈল বাজারের ধান ব্যবসায়ী সুশীল চন্দ্র মন্ডল জানান, এবার বাজারে প্রকার ভেদে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার ধানের দাম বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি। জেলায় এবার বীজ ও সারের কোন সঙ্কট ছিল না তবে রোপা আমনের চারা লাগানোর সময় আকাশের বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দিতে হয়।

এতে ফলনের কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল করিম। রোপা আমন চাষে এবারও জেলার কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: