ফজরের নামাজের সময় চুরি করতেন তাঁরা

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০১:১৫ পিএম

রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে চুরির প্রকোপ বেড়েছে। রাতে ও দিনে সমান তালে চলছে চুরি।রাজধানীর হাতিরঝিলসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় দীর্ঘদিন ধরে চুরি করে আসছিল এমনি একটি চক্র। চক্রটির নারী-পুরুষ সদস্যরা মিলে চুরি করতেন। আর তাঁদের চুরি করার নির্দিষ্ট সময় হলো শেষ রাত ও ফজরের নামাজের সময়। এ সময় বিভিন্ন বাড়ি থেকে মুসল্লিরা মসজিদে যান। আর এই সুযোগে ঘুমের ঘোরে থাকা বাসার গেটের দারোয়ানদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যেতেন বাসাবাড়িতে। পুরো কাজটিই করতেন নারী-পুরুষ মিলে।

এই ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গত ১৬ নভেম্বর একটি চুরির মামলা হয়। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে চোর চক্রের দুই সদস্য। তাঁরা হলেন ফাহিমা আক্তার (৩০) ও তাঁর সহযোগী মো. ফরহাদ আলম মীর (৩৫)। মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. আসিফ এমরান ও তাঁর স্ত্রী ফজরের নামাজ পড়েন। পরে সন্তান ও শাশুড়িকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে স্ত্রীকে নিয়ে হাঁটতে বের হন। এক ঘণ্টা পর বাসায় ফিরে দরজা খোলা অবস্থায় পান। বাসার ভেতরে ঢুকে তাঁদের রুমে গিয়ে দেখেন, আসিফের ব্যবহৃত তিনটি স্মার্টফোন নেই। চুরি যাওয়া তিনটি ফোনের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

এর আগেও এমনি ভাবে অসংখ্য চুরি হয়েছিলো আশেপাশের বাসাবাড়িতে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী দম্পতি এই ঘটনায় মামলা করলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোর চক্রের একজন নারী সদস্যসহ দুজনকে শনাক্ত করা হয়। গত বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ফাহিমাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফাহিমা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাতিরঝিল এলাকার বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে চুরি করছিলেন। তাঁরা ভোরে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেন। নামাজের জন্য বা হাঁটতে বের হওয়ার পর গেট খোলা থাকার সুযোগে চোর চক্রটি বাড়িতে প্রবেশ করে। গুলিস্থান স্টেডিয়াম এলাকায় চুরি মোবাইল বিক্রি করে। এর আগেও এই চোর চক্র ১০ / ১২টি বাসায় চুরি করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান , ‘এ চোর চক্রের নারী সদস্যরা প্রথমে বাসায় প্রবেশ করে। পরবর্তীতে নারী সদস্যের সিগন্যাল পেলে পুরুষেরা যোগ দিত। নারী-পুরুষ চোররা মিলে দীর্ঘদিন ধরে চুরি করে আসছিল।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইদানীং রাজধানীর বিভিন্ন ফজরের নামাজের পর সময় বা নামাজের পর চুরির ঘটনা ঘটনা ঘটছে। সব ঘটনায় মামলা হচ্ছে না। এ কারণে, এ ধরনের ঘটনা দিনদিন বাড়ছে। তাই আমি বলব, কোনো চুরির ঘটনা ঘটলেই মামলা করবেন। হাতিরঝিলে মামলা হওয়ার কারণেই দুজন চোরকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। তাদের কাছ থেকে আরও ১২-১৩টি চুরির ঘটনা জেনেছি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘চুরির সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা সবাইকেই আইনের আওতায় আনব। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহাদাৎ হোসেন সুমা বলেন, ‘এটি একটি অভিনব চোর চক্র। তারা ফজরের নামাজের সময় গেট খোলা রাখার সুযোগের বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে চুরি করত। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে।’

এই ধরনের চুরি রোধে করণীয় সম্পর্কে শহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ফজরের নামাজ আদায় বা হাঁটতে বের হলে বাসার দরজা লক করা বা গেট বন্ধ রাখতে হবে। বাসার দারোয়ান যেন ফজরের নামাজের সময় ঝিমাতে না পারে তার জন্য তাকে সতর্ক করতে হবে। বাসায় অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতে দেখলে তাকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কোন ব্যক্তিকে সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশকে জানানো বা ৯৯৯ এ কল করতে হবে।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: