পাহাড়ি নারীদের তাজা ফলমূল আর তরতাজা সবজি বাজার

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৩১ পিএম

মো. ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) থেকে: খাগড়াছড়ির জেলা ঐতিহ্যবাহী রাজ। যাকে মানিকছড়ি বাজার হিসেবে সবাই চেনে। সাপ্তাহে একদিন শনিবারে সাপ্তাহিক হাট বসে। দীর্ঘ এক কিলোমিটারের বাজারে কি নেই। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মাছ, মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু খুচরা ও পাইকারি দরে বেঁচাকেনা হয় এই হাটে। বিশেষ করে বাজার মধ্যখানে পাহাড়ি নারীদের সংগৃহীত পাহাড়ের তাজা ফলমূল আর ভেজালমুক্ত সবজির বাজার হিসেবেও ক্রেতাদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত লাভ করেছে। এখানকার বিক্রেতাদের মধ্যে হাতেগোনা দুয়েকজন পুরুষ ছাড়া সবাই নারী সবজি বিক্রেতা।

সরেজমিনে সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, সূর্যদয়ের সাথে সাথে মানিকছড়ি, গুইমারা ও লক্ষীছড়ি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নারীরা তাদের জুম চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের উৎপাদিত শাকসবজি নিয়ে বাজারে হাজির হন। ধনেপাতা, থানকুনি পাতা থেকে শুরু করে কলার মোচা, বাঁশকুড়াল, তারাগাছ, কচুশাক, কচুলতি, কাঁচা-পাকা পেপে, কলা, কাঁচা মরিচ, আলু, কচু, ক্ষিরা, জংলি আলু, তিত বেগুন, শামুক, হলুদ, আদা, মাল্টা, কাঁচা তেতুল, আমলকিসহ অনেক কিছুই পাওয়া যায় এখানে। যার অধিকাংশই প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত। যা সমতলের যে কোনো বাজারে পাওয়া দুষ্কর।

পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত দরিদ্র নারীরাই এখানের বিক্রেতা। এখানে শুধু শাক-সবজি বিক্রি করেন তাঁরা। মৌসুমের সময় বিক্রি হয় জুমে উৎপাদিত নানান ধরনের সবজি। এছাড়া সারা বছরই এখানে পাওয়া যায় তাদের সংগৃহিত নানা রকম ফল আর শাক-সবজি। মূলত হতদরিদ্র নারীরা সংসারের আর্থিক যোগান দিতে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সবজি সংগ্রহ করে এ বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রয়ের জন্য। আর এসব সবজি কীটনাশক, রাসায়নিক এবং ফরমালিনমুক্ত তাজা বলে সাপ্তাহিক হাঁটের দিন শনিবার ও প্রতিদিন বিকেলে এ বাজারে ভিড় জামান অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতা।

সাপ্তাহিক শনিবার ছাড়াও পাহাড়ে জুমচাষ অথবা অন্য কাজের ফাঁকে কুড়িয়ে সংগ্রহ করা অল্প অল্প করে হলেও নানান জাতের সবজি নিয়ে বিকেলে বিক্রি করতে চলে আসেন তাঁরা।

উপজেলার আগা ওয়াকছড়ি এলাকার সবজি বিক্রেতা নিনুচি মারমা জানান, পুরো সাপ্তাহ ব্যাপী পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে শাকসবজিসহ বিভিন্ন জিনিসের খোঁজ রাখি। পরে তা শুক্রবার বিকেলে বা শনিবার ভোরে সংগ্রহ করে সাপ্তাহিক হাটের দিন নিয়ে আসি। যা বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আর্থিক যোগান দিতে পারি।

সাপ্তাহিক শনিবার সবজি কিনছিলেন খালেদা বেগম। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, ‘কীটনাশক আর সার ব্যবহার করা শাক-সবজি খেতেও যেমন স্বাদ নেই এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই সাপ্তাহিক শনিবার বাজার থেকে পছন্দ মতো সবজি অল্প অল্প করে নিয়ে যাই।’

সবজি বিক্রেতা মনিকা চাকমা জানান, লক্ষ্মীছড়ির দূর্গম এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। পুরুষের পাশাপাশি পাহাড়ের ঝাড়-জঙ্গল এবং ছড়ার পাড় থেকে সারাদিন বিভিন্ন ধরনের শামুক, শাক-সবজি কুড়িয়ে এনে সাপ্তাহিক হাঁটের দিন তা বিক্রি করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন তিনি। যা দিয়ে পরিবারের আর্থিক যোগান দিতে পারেন।

কথা হয় হাফছড়ি উহ্লামং মারমার সাথে, তিনি সাপ্তাহিক শনিবার ছাড়াও বিকেলে এ বাজারে বিক্রি করেন পাহাড় থেকে সংগৃহীত নানা ধরনের শাকসবজি। প্রায় ৫শ থেকে ২ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেন প্রতিদিন। এ দিয়ে তাঁর দরিদ্র পরিবারের সংসারের খরচের অনেকটা জোগান হয়।

স্থানীয় ক্রেতা নজরুল ইসলাম জানান, খুব সকালেই পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরনের পাহাড়ি শাকসবজি নিয়ে তোকান সাঁজিয়ে বসেন পাহাড়ি নারীরা। তাদের সবজি গুলো কিটনাশসকমুক্ত আর তরতাজা হওয়া প্রতি শনিবার তাদের কাছ থেকে নানা রকমের শাকসবজি কিনে থাকি। যা খেতেও অনেক মজা।

সাপ্তাহিক শনিবারে চট্টগ্রাম শহর থেকে তাজা শাকসবজি কিনতে আসা নুরু মিয়া জানান, পাহাড়ি নারীদের সংগৃহীত শাকসবজি ও অন্যান্য জিনিসের বেশ চাহিদা রয়েছে শহরে। সব সময় যেহেতু বেশি করে কিনতে পারি না তাই শনিবার সাপ্তাহিক বাজারে কিনতে আসি এবং শহরে তা ভালো ধরে বিক্রি করতে পারি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: