আমন ধান কাটা-মাড়াই’র মহাউৎসব ঈশ্বরদীতে

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ০২:২১ পিএম

ফারাবি বিন সাকিব, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে: চলতি আমন মৌসুমে পাবনার ঈশ্বরদীতে ধান কাটা-মাড়াই’র মহাউৎসবের ধুম পড়েছে। এসব আমন ধান কেটে সরিষা, তিল, মটর, মসুর, খেসারি, কালাই, আলু সহ বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য জায়গা খালি করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা দলে দলে ধান কাটা, ধান মাড়াই'র ও ঘরে ধান সংগ্রহে ব্যস্ত। ধান ভালো ও দাম ভালো থাকায় নতুন ধান সংগ্রহে কৃষকদের মনে আনন্দের চিত্র ফুটে ওঠেছে।

ভালো ফলন ও দাম ভালো থাকায় খুশি ধান চাষিরা। তবে কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে তেল, পানি, ও সারের সংকটে আমরা ভয়ে ছিলাম,বিঘা প্রতি গতবারের তুলনায় এবার ১০০০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে, ধানের ফলন ভালো হওয়াই এবার আমরা খুশি। তারা আর ও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি অফিসার রা আমাদের সাথে নিয়মিত পরিদর্শনে আসেন না, আমাদের সমস্যা কথা গুলো আমরা ঠিক মতো বলতে পারিনা, তবে আল্লাহর রহমতে এবারে আমন ধান ভালো হয়েছে, ধানের দাম অব্যাহত থাকলে আগামীতে ধান চাষে আমাদের আর ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে এলাকায় রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে মোট ৩৬১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন আমন ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যে শুরু হয়েছে শীতকালীন ফসল সরিষার চাষ। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিল, মটর, মসুর, খেসারি, কালাই, আলু সহ বিভিন্ন ফসল চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা।

অন্যদিকে মাঠে মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সোনালি রঙের কাটা ধান। ধান কেটে আঁটি বেঁধে সপ্তাহ খানেক খোলা মাঠে ফেলে রাখছেন কৃষক। দেখে মনে হচ্ছে যেন মাঠে সোনা ছিটিয়ে পড়ে আছে। পরে ধানের সাথে খড় শুকিয়ে তা খোলায় নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। মাঠ থেকে ধান তোলার সাথে সরিষা চাষের জন্য জমিতে ফেলা হচ্ছে সরিষা বীজ।

চলতি আমন মৌসুমে বর্ষার পানি পর্যাপ্ত না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন আমন চাষিরা। আবার দেখা দিয়েছিলো সার সংকট এবং হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে ধান চাষে খরচ বেশি হয়েছিলো কৃষকদের। আবার ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মতো। তবে যদি ধানের দাম সরকার বাড়ায় তাহলে লাভের মুখ দেখবেন, বলছেন আমন চাষিরা।

সাঁড়া গোপালপুর এলাকার কৃষক সের আলী বলেন, এবার আমি ৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ধানের দাম ভালো থাকলে লাভের মুখ দেখবো। আশা করি বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাবো।

মুলাডুলির ইউনিয়নের কৃষক নেতা কবির মালিথা জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে, এবার অনাবৃষ্টি, তেল, সারের দাম বেশি থাকায় ভয়ে ছিলাম আমন ধান ভালো হবে কিনা। তিনি বলেন, আমি আধুনিক রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ৬ বিঘা আমন ধান চাষ করেছি, এতে আমার খরচ কম হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, ধান ঘরে উঠতে সময় ও কম লেগেছে।ধান হয়েছে ২৫ মণ করে, মণ প্রতি ১৪০০ টাকা ধান বিক্রি করে আমরা খুশি।

দাশুড়িয়ার কৃষক ওয়াসিম বলেন, ধানের ফলন ভালো হয়েছে, তবে ধান যদি ভালো দামে বিক্রি করতে পারি তাহলে ধান চাষে আমাদের আগ্রহ বাড়বে। এর সাথে উপজেলা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগীতা দরকার, তাদের নজর পড়লেইআরো ফলন বৃদ্ধি পাবে।

ধান কাটা শ্রমিকরা জানান- এবার বর্ষা নাই, মাঠে কোন পানি নেই। এতে আমাদের ধান কাটতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমরা ৭ জন এক সাথে ধান কাটছি। ধান কাটা-মাড়াইতে বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা নিচ্ছি। দিনে দেড় থেকে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পারছি। মাঝে মধ্যে কৃষকরা ধানের বিনিময়ে ও ধান কাটিয়ে নিচ্ছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার জানিয়েছেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ৩৬১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আগাম লাগানো ধান কাটা-মাড়াই প্রায় শেষ করেছেন কৃষক। সরিষা সহ বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য ধান কাটছে কৃষকেরা। উপজেলার অধিকাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। ফলন অনেক ভালো,আশা করছি কৃষক তাদের কাঙ্খিত ফলন সময় মতো ঘরে তুলবেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: