নতুন নিবন্ধন চাওয়া দলগুলোর যাচাই শুরু করেছে ইসি

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৪:০৩ পিএম

নিবন্ধন চাওয়া নতুন দলগুলোর আবেদন যাচাই শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, আবেদনে অন্তত ৯ ধরনের তথ্য পূরণ করতে হয় এবং সেই সঙ্গে ১০ ধরনের দলিলপত্রের সংযুক্তি দিতে হবে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ইসির অধীনে ৩৯টি দল নিবন্ধিত রয়েছে। এর সঙ্গে সব প্রক্রিয়া উতরাতে পারলে যুক্ত হবে নতুন কোনো দল। নিবন্ধন পেতে আগ্রহী ৯৩টি আবেদনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোনো দল টিকবে কিনা জানা যাবে এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, নতুন নিবন্ধন চাওয়া কোন কোন দল চালানের টাকা জমা দেয়নি, কোনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নাম-পদবী দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকায় সঙ্গতি নেই, কোনো দলের গঠনতন্ত্র নেই, কোনো দলের নিবন্ধনের ন্যূনতম শর্তপূরণের দালিলিক প্রমাণ নেই কিংবা ঘাটতি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রেরও। আবার প্রাথমিকভাবে যেসব দলের তথ্য আবেদনে রয়েছে তা সঠিক কিনা তা বাছাইয়ের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ সংক্রান্ত ইসি সচিবালয়ের একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে উপস্থাপনের পর কমিশন দেখবে।

কমিটির আহ্বায়ক ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ৯৩টি আবেদন পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ইসির বিবেচনার জন্যে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। আমরা নির্ধারিত চেক লিস্টের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত দলিলাদির বিষয় তুলে ধরবো। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।

বাছাইয়ের প্রক্রিয়া যেভাবে হয়-

১. ন্যূনতম কাগজপত্র ও তথ্য না থাকলে আবেদনপত্র বিবেচনা করা হবে কিনা তা বাছাই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

২. কোন দলের নিবন্ধন নিয়ে কারো আপত্তি রয়েছে কিনা দেখবে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি আবেদন মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করতে পারে। আপত্তি না পেলে আবেদন নেবে।

৩. প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত-দলিল যাদের রয়েছে, কোনো ধরনের সামান্য ঘাটতি তা ত্রুটি সংশোধনের থাকলে বিধি মেনে তা জমা দিতে সময় দেওয়া হবে। কাগজপত্র জমা না দিলে তো অযোগ্য বিবেচিত হবে; আর জমা দিলেও তা বাছাই কমিটি দেখে করণীয় নির্ধারণ করবে।

৪. মাঠ পযায়ে তদন্তে পাঠানোর মতো ক’টি দল রয়েছে বাছাই কমিটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। এসব দলের আবেদনপত্রের দলিলাদি ও তথ্য সঠিকতা যাছাইয়ে তদন্তে যাবে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক নির্বাচন কর্মকর্তা সম্পৃক্ত করা হবে। এ কাজটি করতে সময় লাগবে। কারণ, কেন্দ্রীয় দপ্তর ও কমিটির পাশাপাশি এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা, ন্যুনতম একশ’ উপজেলার দু’শ ভোটারের সমর্থন তালিকা রয়েছে। অসত্য তথ্য মিললেই ঝরে যাবে।

৫. কোনো রকম বাছাইয়ে উতরে যাওয়ার মতো দল থাকলেও শেষধাপে নিবন্ধন সার্টিফিকেট পাবে, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করে ইসি। জুলাই-অক্টোবর পযন্ত চার মাসে ৯৮টি আবেদন থেকে কয়েকটি একাধিকবার হওয়ায় বাদ দিয়ে ৯৩টি দলের আবেদন পেয়েছে বলে জানানো হয়।

৬. ২০০৮ সালে নবম সংসদের আগে ১২৬টি আবেদনের মধ্যে নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। পরবর্তীতে ১টি দলের (ফ্রিডম পার্টি) নিবন্ধন বাতিল হয়।

৭. এরপর দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে ৪৩টি আবেদনের মধ্যে তিনটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। বাতিল হয় আরও ১টি (জামায়াত) দলের নিবন্ধন।

৮. একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ৭৬টি দল আবেদন করলেও একটি নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয় নি। আরও একটি দলের (ঐক্যবদ্ধ নাগিরক আন্দোলন) বাতিল হয়।

৯. অবশ্য, আদালতে গিয়ে ২০১৯ সালে দুটি দল আদেশ নিয়ে এলে যুক্ত হয়; তবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে নি। ২০২০ সালে একটি দল (পিডিপি) ও সবশেষ ২০২১ সালে নিবন্ধন বাতিল হয়েছে (জাগা) আরেকটি দলের।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের শেষে সপ্তাহে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। ভোটের ছয় মাস আগেই রোডম্যাপ অনুযায়ী নতুন দলগুলোর নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করবে ইসি। এর আগে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সাল থেকে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর এক যুগে ৪৪টি দল নিবন্ধন পেয়েছে। কিন্তু শর্ত পূরণে ব্যর্থ এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (ফ্রিডম পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন পরে বাতিল করা হয়।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: