শতাধিক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর তাজরীন ট্রাজেডির ১০ বছর আজ

সাভারের তাজরীন ট্রাজেডি অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর অতিবাহিত হচ্ছে আজ। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে কারখানাটির ১১৩ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান। আর আহত হন কয়েক শ শ্রমিক। সেই দুঃসহ স্মৃতি হৃদয় থেকে ভুলতে পারেনি অগ্নিকাণ্ডে হতাহত শ্রমিক ও তাদের পরিবার। এখন তারা জীবনযাপন করছেন মানবেতর। দেশের ইতিহাসে শতাধিক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ট্রাজেডি এটাই প্রথম।
২৪ নভেম্বর মনে করিয়ে দেয় নিহতদের পরিবারের স্বজন হারানোর বেদনা। এই দিনে কেউ হারিয়েছে মাকে, বোনকে, বাবাকে কেউ বা আবার হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। এইদিন ডুকরে কেঁদে ওঠে স্বজন হারানো মানুষগুলো। উপার্জনক্ষম মানুষগুলোই এখন তাদের পরিবারের বোঝা, কেউবা কোনোমতে দোকান দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন যুদ্ধ। কেউবা চিকিৎসা করাতেই নামমাত্র ক্ষতিপূরণসহ শেষ করেছেন তাদের সর্বস্ব। আবার অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন ক্ষতিপূরণ থেকেও। তারা আজ ১০ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন ক্ষতিপূরণের আশায় আর প্রহর গুনছেন পুনর্বাসনের।
আহত শ্রমিকরা সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাময়িক কিছু সহায়তা পেলেও পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পাননি। বহু পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম মানুষ হারিয়ে ঘোর বিপদে পড়েছে।
তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছরে নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত ব্যক্তি, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কারখানার ফটকের সামনে আগামী ২৪শে নভেম্বর সারাদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ১০ বছর পার হতে যাচ্ছে। এখনো নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রেবা খাতুন ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনের তিন-তলায় সুইং অপেরটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনিও সেদিন আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর তিন তলা থেকে লাফ দেন। সেই লাফ দিয়ে নিচে নামায় তার কোমরে হাড় ও পায়ে ব্যথা পান। সেই ব্যাথা নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নেতাসহ পোশাক সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে ক্ষতিপূরণ ও মালিকের বিচারের দাবি করে আসচ্ছেন। কিন্তু কোনো দাবিও এখনো তাদের পূর্ণ হয়নি।
তিনি বলেন, এই দশটা বছর কতো না জায়গায় গিয়েছি। শুধু বিদেশি কিছু সহায়তা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। শেষমেশ এখন যদি কোথায় আমাদের দাবি জানাতে যাই তাহলে নানা মহল থেকে চাপ আসে। এ যাবৎ লাখ খানেক টাকা সহায়তা পেয়েছি তবে সেটা ক্ষতিপূরণ না। আমার মালিকের বিচার চাই আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।
আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনের নেতৃত্ব দেন শিল্পী রানী। তিনিও তাজরীন গার্মেন্টসের আগুনে পুড়ে যাওয়া ভুক্তভোগী একজন শ্রমিক। তিনি বলেন, আমরা কার কাছে কি বলবো। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কথা বলতে গেলে পরে খুঁজে বের করে নানা চাপ দেয়। এ যাবৎ কাল অনেক বলেছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি। আজ এতোগুলো শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের খোঁজ কে রাখে। আমাদের কোনো দাবি এখনো পূর্ণ হয়নি। সরকার তো পারে আমাদের তাজরীনের ভবনটি আমাদের জন্য কাজে লাগানোর কিছু শ্রমিক হলেও তো সেখানে থাকতে পারবো।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন, তাজরীনে আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার ১০ বছর পার হলেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে মালিকপক্ষের অবহেলায় পোশাকশিল্পে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি অবিলম্বে তাজরীনের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিল্পবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু বলেন,২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তোবা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের ঐকারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের সুপরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ১১৩ জন শ্রমিককে হত্যা করেছে এবং আহত হয়েছে শতশত শ্রমিক।
গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কাস লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রাকিবুল ইসলাম সোহাগ বলেন, তাজরীন ট্রাজেডির আজ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তাজরীনের ভবন দানবের মতো দাড়িয়ে রয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে যেসকল শ্রমিক নিহত ও আহত হয়েছিলো সেকল শ্রমিক এবং তাদের পরিবার কে এই ভবনে নতুন কোনো কারখানা অথবা হাসপাতাল বানিয়ে তাদের কে পুনর্বাসন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কাস লীগের।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: