বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউব উদ্বোধন আজ

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১১ এএম

বাংলাদেশের জন্য আরেক বিস্ময়, আরেকটা গৌরব কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের একটি টিউবের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আজ শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকালে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, টানেলের দক্ষিণ টিউবের কাজ শেষ হয়েছে। এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকে ভার্চুয়ালি এই টিউব উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, টানেলের পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আগামী ডিসেম্বর পুরো মাস লাগতে পারে। এরপর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সব কাজ শেষ করে টানেল প্রস্তুত হতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সব ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে টানেল দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে।টানেল প্রকল্প পরিচালক দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেগা প্রকল্পটি। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়ি। নদীর তলদেশে টানেল নির্মিত হওয়ায় যে কোনো সময় পানি জমতে পারে এই আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এছাড়া  নদীর তলদেশে স্থাপিত দুটি টিউবের একটিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, বর্তমানে তারও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও একই সঙ্গে চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ৭৭২ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।

এই টানেল বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অর্জন করবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। ইতিমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী তলদেশ দিয়ে অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট।

উল্লেখ্য, মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর নিচে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউব। এর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলে টিউব দুটি থাকলেও সংযোগ পথ আছে তিনটি। এর মধ্যে একটি বিকল্প পথ হিসেবে প্রথম দুটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ হয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থানে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: