মানুষের ঘরের তালা খুললেও, নিজের ভাগ্যের তালা খুলতে পারেনি মকবুল
মকবুল মন্ডল, বয়স ৭১ বছর। মানুষের ঘরের তালা খোলার ব্যবস্থা করলেও নিজের ভাগ্যের তালা খুলতে পারেনি। জোটেনি সরকারের বয়স্ক ভাতাও। এই ঠান্ডায় মাটিতে বিছানো পাতলা চটের উপর বসে কাজের ফাঁকে কথা হলো মকবুল মন্ডলের সঙ্গে, জেলা শহরের তৃপ্তির মোড়ে ১ নং স্টেশন রোডে ডা: মোহাম্মদ আলীর চেম্বারের পাশে বসেই দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তালা মেরামত, নতুন চাবী তৈরি, গ্যাস লাইটে গ্যাস ভরানো ও মেরামতের কাজ করে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে চলছে মকবুল মন্ডলের সংসার। জাতীয় পরিচয় পত্রে দেখা যায়, ১৯৫১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মকবুল মন্ডলের জন্ম। বাবা মমতাজ মন্ডল, মা ঠান্ডি বেওয়া। বসবাস করেন জেলা শহরের সাহেবপাড়া মহল্লায়।
এক সময় জমিজমা সহ অনেক কিছু থাকলেও এখন শুধু মাথা গোঁজার তিন শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই নেই। সেখানে বেড়া আর টিনের ছাউনির নিচে বসবাস করছেন স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি নাতনিদের নিয়ে। নিজের শক্তি সামর্থ থাকা অবস্থায় ধান ভাঙ্গা মিলে কাজ করা সহ দিন মজুরীর আয় দিয়ে সংসার চালাতেন। এখন বয়সের ভারে নূহ্যে পড়া মকবুল মন্ডল আর ভারি কোন কাজ করতে পারেনা। মানুষের কাছে হাত পাতা তার ভালো লাগে না তাই গ্যাস লাইটে গ্যাস ভরানো ও গ্যাস লাইট মেরামতে যা আয় হয় তা দিলে চালাতে হচ্ছে সংসার। দুই ছেলে দুই মেয়ে সংসারে। সকলেই বিবাহিত। বিয়ের পর খুরশিদা নামে এক মেয়ের মৃত্যু হলে তার রেখে যাওয়া নাতী শিফাতও বেড়ে ওঠেন নানা মকবুল মন্ডলের কাছে। শিফাত এসএসসি পাশ করে চাকরী না পাওয়ায় হকারী করে বাজারে ঘুরে ঘুরে এনার্জি সেভিং বাল্ব বিক্রি করে।
এক ছেলে সোহেল মেসি গাড়ী চালায়, আবার কখনও টিনের কাজসহ অন্যান্য দিনমজুরের কাজ করে। অপর ছেলে সজল ভাড়ায় অটোরিকশা চালায়। স্ত্রী হাছনা বানু প্রায় অসুস্থ থাকে। সীমিত আয়ে সংসারের খরচ চালাতে যখন চরম হিমশিম খেতে হয় সেখানে স্ত্রীর চিকিৎসা আর ঠিকমতো করা সম্ভব হয়না।
মকবুল মন্ডল জানান, একটি গ্যাস লাইট মেরামত করলে বা গ্যাস ভরে দিলে মাত্র ৫ টাকা পাওয়া যায়। আর ব্যাটারী লাগালে পাওয়া যায় ২ টাকা। এতে প্রতিদিন ৫০ কখন ৬০ টাকা পাওয়া যায়। আবার অনেকদিন এক টাকাও হয়না। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এ বাজারে অল্প ইনকামে কিভাবে চলি প্রশ্ন করেন মকবুল। বয়স্ক ভাতার জন্য কয়েকবার পৌরসভায় ও সমাজসেবা অফিসে ন্যাশনাল আইডি জমা নিলেও এখনও তার ভাগ্যে জোটেনি সেই বয়স্ক ভাতা নামক সোনার হরিন। অফিসের লোকজন বলেছে এখনও বয়স হয়নি। কত বয়স হলে মকবুল মন্ডল পাবেন বয়স্ক ভাতা? সরকারের সহায়তা হিসেবে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলে এই বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের চিকিৎসা সহ অন্যান্য কাজে ব্যয় করতে পারতেন বলে জানান, মকবুল মন্ডল।
ডা: মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার চেম্বারের সামনেই মকবুলসহ বেস কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে ওই তালা মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কোথাও তাদের বসার জায়গা নেই। চেম্বারের সামনে বারান্দায় বসে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ করা অনেক কষ্টের বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: