সরকারি জায়গায় দোকান বাণিজ্য, ব্যবসায়ীরা জিম্মি!

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গা দখল করে দোকান ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাজী বিপু রহমান নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। অস্থায়ী প্রতিটি দোকান পজিশন দেখিয়ে স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে প্রায় বিশজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছ জামানত বাবদ প্রায় কোটি টাকা। সম্প্রতি সওজের অপসরণ নোটিশ পেয়ে শঙ্কিত এসব ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষ দাবী করা বিপু রহমানের সাথে ব্যবসায়ীদের কথা হলে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বিপু রহমানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
বিপু রহমানের দাবি, মালিকানা জায়গাতেই দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সড়ক বিভাগ বলছে, দ্রুত অবৈধ্ দোকানগুলো উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোপূর্বেও এই সরকারি জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও জনপথ। এর পরপরই পুনরায় দোকান বানিজ্য শুরু করে বিপু রহমান।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, পঁচিশ বর্গফুট জায়গার জন্য অবস্থান ভেদে অগ্রিম দিতে হয়েছে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা সেইসাথে মাসিক ভাড়া ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ভাড়া তোলা হয় এই অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে। প্রায় এক দশক সময় ধরে সওজের জায়গা দখলে রেখে ভাড়া দিয়ে বিপু রহমান জামানত গ্রহন ও মাসিক ভাড়া আদায় করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এসকল দোকান ভাড়ার টাকা উত্তোলন ও দেখভাল করেন কাজী বিপু রহমানের ম্যানেজার মো. কাজীমুদ্দিন।
মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগ (সওজ) জানায়, কাজী বিপু রহমানসহ ১৫ জন ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময় মৌখিকভাবে দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। সবশেষ চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখে তাদেরকে দোকানগুলো পাঁচ দিনের মধ্যে অপসারন করার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
মো. সোহান মিয়া নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, বিপু রহমানকে মাসে তিন হাজার পাঁচশো টাকা ভাড়া দিতে হয়। এ টাকা প্রতি মাসে কাজী নামের ম্যানেজার নিয়ে যায়। এ ব্যবসা করেই আমাদের সংসার চলে। এখন উচ্ছেদ করে দিলে বিপদে পড়ে যাবো।
মো. হানিফ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ওয়াল করে টিনশেড ঘর নির্মান করে দেওয়ার জন্য বিপু রহমানকে তিন বছর আগে পনের লাখ টাকা জামানত দিয়েছি। পরে জানতে পারি জায়গাটি সরকারি। তারপর জামানতের টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানায় আর ফেরত পাচ্ছিনা। জামানত ফেরত না দিয়ে এখানে পাঁচ ফুট পজিশনের চারটি অস্থায়ী দোকান করতে দিয়েছে।
মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এখানে ব্যবসা করতে এসে প্রথমে জানি এটা বিপু রহমানের জায়গা। পাঁচ ফুট জায়গার দোকান নিতে তিন বছরের চুক্তিতে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছি। প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে ভাড়া দিচ্ছি। ভাড়ার টাকা বিপু রহমানের ম্যানেজার কাজী ভাই নেন। গত মাসের শেষের দিকে দোকান অপসারনের নোটিশ পেয়েছি। এখন জামানতের অগ্রিম টাকা ফেরত পাবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আরো একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, নবীন সিনেমা হলের সামনে হওয়ায় সবাই জানে এটা তাদের জায়গা। দোকান বসাতে গেলে ম্যানেজার কাজীর সাথে কথা বলে বিপু রহমানের কাছে অগ্রিম জামানত দিতে হয়। এ বিষয়ে তারা আমাদের সাথে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে দেয়। দোকান পজিশন পাওয়ার পর প্রতি মাসে ম্যানেজার কাজী ভাড়া উত্তোলন করে। বিগত অর্ধযুগ ধরে এভাবেই আমরা ব্যবসা করে আসছি। তবে সম্প্রতি জানতে পারি এটা সড়ক বিভাগের জায়গা।
এ বিষয়ে ম্যানেজার মো.কাজীমুদ্দিন বলেন, সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ার ও আমাদের সার্ভেয়ার দিয়ে জায়টি পরিমাপ করা হয়েছে। উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া জায়গাটি সড়ক বিভাগের নয়। ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের চুক্তি আছে। তারা প্রতি মাসে ভাড়া দেয়। যদি উচ্ছেদের কারনে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবশ্যই সেটি মালিকপক্ষ বিবেচনা করবেন। তবে জায়গাটি কোনভাবেই সড়ক বিভাগের নয়।
এ বিষয়ে কাজী বিপু রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোটি টাকা জামানত নেওয়ার বিষয় সঠিক নয়। কাপড়ের দোকান ভাড়া দেওয়ার জায়গাটি আমাদের ব্যক্তি মালিকাধীন। পরিমাপ করার পর যদি জায়গাটি সড়ক বিভাগের হয় তাহলে তারা নিয়ে যাবে।
মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গাউস-উল-হাসান-মারুফ বলেন, নবীন সিনেমা হলের সামনে কাপড়ের দোকানগুলো সড়ক বিভাগের জায়গা বিধায় তাদের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। দোকানগুলো না সরিয়ে নিলে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: