গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র, অপার সম্ভাবনায় রয়েছে নানা সমস্যা

প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৪ পিএম

সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্যের উঁচু নীল তুরক পাহাড়। পাখিদের সঙ্গে উড়ে আসে সাদা সাদা মেঘ। মেঘগুলো পাহাড়ে ঝর্ণা হয়ে ঝঁড়ে। এপারে ছোট-বড় পাহাড়ের গাছে ছুটে কাঠ বিড়ালী, বানর। আরও কত অপরুপ দৃশ্য। যেমনটি বলছি, এমন দৃশ্যই দেখা যায়, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রে। গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রের পাহাড়ের চুড়ায় দাড়িয়ে দেখা যায়, সীমান্তে ওপারে মেঘালয় রাজ্যের মানুষের জীবন ও জীবিকার দৃশ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হালুয়াঘাট পৌর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা গাবরাখালী পাহাড়। ১২ কিলোমিটারের এক কিলোমিটার ইটের তৈরী ভাঙা-চোড়া সড়ক। প্রায় পাঁচফুট প্রশস্ত সড়ক দিয়ে ভ্যানে অথরা অটোরিকশায় চড়ে ওই পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হবে। বাস কিংবা অন্য বড় যানবাহন নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাবরাখালীতে একসময় হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। সীমান্তঘেঁষা এই গ্রামের উত্তর প্রান্তে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা। ১২৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছোট-বড় ১৬৭টি টিলা। কোনোটি প্রায় ৭০ ফুট, আবার কোনোটি ২০০ ফুট উঁচু। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৯ সালের শেষের দিকে গাবরাখালীতে পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ২০২০ সালের মাঝা-মাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এই পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধান হলে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এটি অনন্য ভূমিকা রাখবে।

ছবি: প্রতিনিধি

পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে এটা উপযুক্ত জায়গা। তবে, বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রে। এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। যে কারণে কারোর সাথে যোগাযোগ করা যায় না। এখানে চা বিস্কিট খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নেই ভাল মানের খাবার। এখানে বিশুদ্ধ পানি নেই। বোতলের পানি খেতে হয় পর্যটকদের। পর্যটন কেন্দ্রের পাশে কুয়া রয়েছে। কুয়ার পানি ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। পর্যটক টানতে হলে ওয়াইফাই, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ভাল যাতায়াত ব্যবস্থা, আবাসিক থাকার ব্যবস্থা, ভাল মানের খাবার এবং জীবন রক্ষাকারী বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা আগে করা প্রয়োজন।

তবে, পর্যটনকেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ, লেকে আসা দর্শণার্থীদের জন্য প্যাডেল বোটের ব্যবস্থা। লেকে দেখা মিলবে দেশি হাঁসের দল। পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য গারো ভাষায় জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা) নামে দুটি বিশ্রামাগার। এছাড়াও আছে গাড়ি পার্কিং করার ব্যবস্থা।সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫.১৫ টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই কেন্দ্র।

ধোবাউড়া থেকে স্বপরিবারে ঘুরতে আসছেন মোঃ তারা মিয়া। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, এখানে দেখার মত অনেক কিছু আছে। এখানে পাহাড়ের উপরে দাড়ালে ভারতের ভিতরের দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু, এখানে বেশ কিছু সমস্যা আছে। যেমন এখানে বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যবস্থা নেই, ছেলে মেয়েদের নিয়ে দুপুরে খাব এ সবের ব্যবস্থা নেই, আবাসিক থাকার মত কোন ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যাগুলো সমাধান হলে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

ছবি: প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই পর্যটন কেন্দ্র দেখতে আসছেন আঞ্জাম আশরাফী অনন্ত। তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, আসার সময় যে রাস্তাটা দিয়ে এসেছি, সেটার অবস্থা একেবারেই বেহাল। এই রাস্তা দিয়ে বড় কোন গাড়ি আসাটা অসম্ভব। এখানে ডুকার পর থেকে মোবাইলে নেটওর্য়াক নেই, তাই কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। তাছাড়া, এখানে ভাল মানের খাবারের হোটেল নেই। এই সমস্যাগুলো সমাধান হলে দর্শনার্থীরা এখানে আসতে পারে।

পর্যটন কেন্দ্রে মামা চটপটির দোকান্দার সোহেল মিয়া বিডি২৪লাইভকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগেও অনেক পর্যটক আসত। এখন কিছুটা কম আসে। এখানে খাওয়ার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। বোতলের পানি কিনে খেতে হয়। এছাড়া আরও বেশ কিছু সমস্যা আছে। যে কারণে দর্শনার্থী খুব কম আসে।স্থানীয় আরেক দর্শনাথী ইব্রাহিম বিডি২৪লাইভকে বলেন,এখানে সবচাইতে বড় সমস্যা মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না, যে কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাস্তার অবস্থা ভাল না। দেয়াল না থাকায় অনেক পর্যটক ভারতের সিমান্তে চলে যায়, সিকিরিউরিটিও কম।

পর্যটন কেন্দ্রের আরেক ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বিডি২৪লাইভকে বলেন, এই পর্যটন কেন্দ্রের সবচাইতে বড় সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানির। এখানে অনেকবার টিউবওয়েল স্থাপনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু, নলকুপ স্থাপনের সময় এক থেকে দেড়শ ফুট নিচে পাথর পরে। যে কারণে নলকুপ স্থাপন করা যাচ্ছে না। আমরা এখানে যারা আছি সবাই কুয়ার পানি পান করি। পর্যটক যারা আসেন তারা বোতলের পানি পান করেন। এই সমস্যা সমাধান হলে পর্যটক বাড়বে আমাদেরও সুদিন ফিরবে।

গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রের সুপারভাজার মোঃ নিজাম উদ্দিন বিডি২৪লাইভকে বলেন, গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র নতুন সৃষ্টি। সাবেক জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এই পর্যটন কেন্দ্র চালু হয়। এটা আসলে দেশের একেবারে অত্যান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। এখানে রাস্তা বলতে কিছুই ছিল না। ছিল ৫ ফুট প্রশস্তের কাঁচা রাস্তা। সম্প্রতি ইট দিয়ে রাস্তা সলিং করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা খুবই পরিশ্রম করছি এটাকে আকর্ষণীয় করে তুলার জন্য। এখানে সিকিউরিটির যে কথাটা বলা হচ্ছে। এর জন্য ১৪ জন স্টাফ সব সময় দেখাশোনা করছেন। এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয় না।

এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে। মোবাইলের নেট পাওয়া যায় না। পর্যটকদের জন্য ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা প্রশাসনকে জানানো হবে, তারা বিষয়টি দেখবেন। পাহাড়ি অঞ্চল হলেও এখানে কোন দিন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। মাদকের আড্ডার কোন প্রশ্রয় নেই এই পর্যটন কেন্দ্রে। এছাড়াও আমাদের পুলিশ প্রশাসন এবং বিজিবি সদস্যরা অনেক সময় টহল দিচ্ছে। আমাদের পর্যটন কেন্দ্রের চারপাশে কাটা তার পার হয়ে কোন দর্শনার্থী যেন সীমান্তে চলে না যায়। তাই, সীমান্ত এলাকায় সাইনবোর্ড দেয়া আছে। তাছাড়া মাইকিং করে আশা দর্শনার্থীদের সতর্ক করা হয়।

ইতোমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রটি ঘিরে বিভিন্ন দোকান করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে এখানে প্রধান ফটক, সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, শিশুপার্ক, তথ্যকেন্দ্র, মিনি চিড়িয়াখানা ইত্যাদির কাজ চলমান রয়েছে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা হাসান বলেন আজই আমার এই অফিসে প্রথম দিন। ওই পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। তবে, যেসব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। যেমন বিশুদ্ধ পানি, মোবাইলে নেটওয়ার্ক, যাতায়াতের রাস্তা, আবাসিক থাকার ব্যবস্থা এবং ভাল মানের খাবার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে। তা খোঁজ নিয়ে অচিরেই এসব সমস্যা সমাধান করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: