ভেজালে ভেজালে সয়লাব বাজার, খাওয়ানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া!

বাঙালির রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করতে মরিচে গুড়া, হলুদ ও মসলা ব্যবহারের রীতি সেই মোগল আমল থেকেই চলছে। একেক মসলার রয়েছে একেক রকম স্বাদ ও গন্ধ। আমরা খাবারে সেই স্বাদ আনতে প্রতিদিন যেসব মরিচে গুড়া, হলুদ ও মসলা ব্যবহার করছি তা মোটেও নিরাপদ নয়। বাজার থেকে কিনে আমরা যেসব মসলা বা খোলা তেল তরকারিতে দিচ্ছি তার ৯০ ভাগই এখন ভেজাল।
অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে মরিচ, হলুদ ও গুড়া মসলায় ভেজাল মেশানোর ভয়াবহ চিত্র। শেরপুর পৌরশহরের বারদুয়ারি হাট এলাকায় মুজাহিদ মিল, বাবুর মিল ও আশরাফ আলীর মিলসহ বেশ কিছু মিলে ভেজাল মরিচে গুড়া, হলুদ ও গুড়া মসলা ভেজালের চিত্র উঠে এসেছে। এসব স্থানে শুকনা মরিচ, হলুদ ও গুড়া মসলা ভাঙানোর মিলে প্রতিদিন মণকে মণ তৈরি করা হচ্ছে যার পুরোটাই ভেজাল।
মুজাহিদ মিল ও বাবুর মিলে দেখা গেছে মরিচে গুড়া, হলুদ ও গুড়া মসলার সাথে মেশানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া, টেক্সটাইলের বিষাক্ত রঙ, ধানের কুড়া, পঁচা গম, পঁচা ভুট্টা। মুজাহিদ মিলের মালিক মুজাহিদ বলছেন, আমরা এক মিল দিয়েই আটা, হলুদের গুড়া, মরিচের গুলা, ধনিয়ার গুড়া ও গরু বা হাস-মুরগির খাবার গুড়া করি। সে কারনে এসকল গুড়ার মাঝে এসব থাকতে পারে। তাকে মরিচের গুড়ার দাম জানতে চাইলে তিনি ৪শ টাকা কেজিতেই বিক্রয় করেন বলে জানান। তবে ভেজালের বিষয় জনতে চাইলে তিনি জানান এটা বর্তমানে স্বাভাবিক বিষয়।
বুবুর মিলের কর্মচারী সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি হলুদ ও মরিচের মধ্যে পঁচা গমের আটার কথা স্বীকার করে। তবে গুড়া হাতে নিয়ে দেখা যায় ধানের গুড়া ও রংও মিশিয়েছেন কিন্তু ভালোভাবে না মেশানোর কারণে স্পষ্ট সেগুলো দেখা যায়। এসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব বিষাক্ত উপকরণ মিশিয়ে প্রতিনিয়ত বিক্রি করছে। খোলাবাজারে এসব সরবরাহ করছে শেরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায়।
আমইন এলাকার আবুল কাশেম বলেন, খাঁটি মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া ও মসলার গুড়া পাওয়াই দুস্কর, সেখানে বোঁটা ছাড়া মরিচের গুড়ার কথা তো চিন্তাই করা যায়না। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, বাজারের যে মরিচের গুড়া রয়েছে সেখানে কোন কিছু না থাকলেও নিন্ম মানের পচাঁ মরিচ ও ৩০ শতাংশই থাকে মরিচের বোঁটার গুড়া, যা খাদ্যের কোন অংশ নয় এবং পরিমাণ বাড়ানো ছাড়া এর অন্য কোন ভূমিকা নেই। ফলে আমরা প্রতিনিয়তই মরিচের আসল স্বাদ, রং ও গন্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং মরিচের সাথে বোঁটার গুড়াও খাচ্ছি।
এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির খাবার ধানের কুড়া ও রাসায়নিক কেমিকেল মিসিয়েও বানানো হচ্ছে হলুদ, মরিচ ও ধনিয়ার গুড়া। যা স্বস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিলের কর্মচারী জানান, ১ কেজির গুড়ার সঙ্গে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত ধানের কুড়া মেশানো হয় এবং পরিমান মত দেওয়া হয় রং।
এসব মিল ঘুরে আরোও দেখা যায়, বিএসটিআই, ট্রেড লাইন্সেস, মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে মানুষ ও পশুর নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার। এর ফলে মানবদেহে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রোগ বালাই। তবে বাজারের এসব মিল থেকে এ মসলা পাইকারদের মাধ্যামে ভোক্তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এলাকার সর্বত্র।
ভেজাল মসলা খেলে কি হয় এ প্রশ্নে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, খাবার অযোগ্য উপাদান দিয়ে তৈরি এসব খাবার খেলে হতে পারে মারাত্মক পেটের সমস্যা। এমনকি গ্যাস্ট্রিক, আলসারে মতো কঠিন রোগও বাসা বাঁধতে পারে শরীরে, হতে পারে ক্যানসারের মতো মারণব্যাধিও। অতিরিক্ত মাত্রায় এসব পেটে গেলে যে কেউ হতে পারে ফুড পয়জনিংয়ের শিকার।
সরিষার তেল, সয়াবিন, পাম ও সুপারের মাঝে রং মিশিয়ে সরিষার কালার করা হচ্ছে। এবং সরিষার তেলের যে ঝাঁঝ, সেটা নিয়ে আসান জন্য এক ধরনের কেমিকেল মিশিয়ে সেই ঝাঁঝ বানিয়ে সরিষার তেল বলে বিক্রি করা হচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, আমি মাত্র কয়কমাস হল এসেছি। অচিরেই অভিযানে চালানো হবে। ভেজালের সত্যতা পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: