অদম্য মেধাবী তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েও শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত
ফারাবি বিন সাকিব, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে: ‘চলার পথে জীবন রথে, নিজেকে গড়ে তুলছেন এক শিক্ষার্থী’। সেই শিক্ষার্থী জিপিএ গোল্ডেন পেয়েও অভাবে নিদারুণ কষ্টে কলেজে ভর্তি হওয়া ও আগামীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্থ কিভাবে জোগাবে তা নিয়ে পরিবারের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে পরিবারের।
বাবা হতদরিদ্র হাটে শাক সবজি বিক্রি করেন। সপ্তাহে ৪ দিন হাট থাকে, হাটে কোন রকম সবজি বিক্রি করে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। আবার হাট ইজারা দিতেই ১০০ টাকা চলে যায়। সংসারের হাল ধরতে আবার কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেন বাবা, পিতার সাথে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে প্রাইভেট পড়ান মেয়ে তামান্না আক্তার। বলছি ঈশ্বরদী মূলাডুলি ইউনিয়নের সড়াইকান্দি গ্রামের সোলায়মান হোসেনের কথা। মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না আক্তারের বাবা, মেয়ের ইচ্ছা শক্তি ও স্বপ্ন পূরন করতে দিনরাত পরিশ্রম করেন তিনি। অদম্য এই মেধাবী ছাত্রী বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এবারের এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। তাই নিজের অর্থের যোগান দিতে স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় প্রাইভেট ও বাসায় দুই একটি ছাগল পালন করতেন। কিন্তু এখন ছাগল পালন ও করতে পারেনা।
দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্লাশ ফাইভ এ মেধাবৃত্তি দিয়ে তামান্না বই, খাতা-কলম কেনা হলেও প্রাইভেট পড়ার খরচ ও মেয়ের চাহিদা জোগান দেওয়ার মতো সম্ভব ছিল না দিনমজুর বাবার। এতে বাধ্য হয়ে নিজের পড়াশোনার ক্ষতি করে প্রাইভেট পড়িয়ে ও ছাগল পালন করে কোনরকম ৪ কিলো দূরে স্কুলে পড়তে যেতেন তামান্না। এভাবে দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এ বছর (২০২১) এসএসসি পরীক্ষায় তামান্না বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এদিকে পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি পাওয়া তামান্না এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি পরিবারের দরিদ্রতার কারণে তামান্না উপজেলা শহরের কলেজেও ভর্তি হতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এতে ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে তামান্নার। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে আগামীতে মেয়েকে কিভাবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন সেই স্বপ্ন অনেকটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
সরজমিনে গিয়ে তামান্নার বাবা সোলায়মান হোসেনের সাথে বিডি২৪লাইভের প্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি একজন সবজি বিক্রেতা। কখনো হাটে সবজি বিক্রি করি আবার কখনো পায়ে হেটে, ছুটির দিন গুলাতে কৃষি কাজে যায়, কখনো কাজ খুঁজে পাই আবার পাইনা। দিন আনি দিন খাই। আবার কোনদিন দিন আনতে পান্তা ফুঁরায় আমাদের সংসারে।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে ছোট থেকেই মেধাবী। ক্লাশ ফাইভ এ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলো, সেখান থেকেই কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেতো,তাতে বই খাতা কলম কিনা হয়ে যেতো, তখন সংসার ছোট থাকায় কষ্ট হলেও কোন রকম ভাবে মেয়েকে পড়ালিখা করাতাম। আমার ২ মেয়ে ১ ছেলে।তামান্না সবার বড়, মেজো মেয়ে ক্লাশ ফোর এ পড়ে আর ছোট ছেলেটির বয়স কয়েক মাস।ইচ্ছা আছে মেয়েটি কে পড়ালিখা করানোর। আমার মেয়ে জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। বৃত্তবান ও সরকারি সহযোগিতা পেলে মেয়েটিকে কলেজে ভর্তি করে আগামীতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবো।
তামান্না মা হাবিবা আক্তার শাপলা জানান, আমার মেয়ে ছোট থেকেই পড়ালিখায় ভালো, খুব অভাব অনটনের মধ্যেই তার ইচ্ছা শক্তি দেখেছি পড়ালিখা করতে। এতোদিন মেয়েকে কোনভাবে পড়ালিখা করিয়েছি। এখন কলেজে ভর্তি হবে। পড়ালিখার খরচ ও কলেজে কিভাবে ভর্তি করবো এটা নিয়ে চিন্তায় আছি।আমার মেয়ে তামান্না ভালো ছাত্রী হওয়ার কারণে পড়াশোনার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছে।
প্রতিবেশিরা জানান,তামান্না আমাদের এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এতে আমাদের গ্রামবাসী খুবই আনন্দিত। তামান্না ছোট বেলায় থেকেই অদম্য মেধাবী, পরিবারের আর্থিক অনটনের মধ্যেও সংগ্রাম করে পড়ালিখা করেছে। ছোট বেলায় থেকেই দেখে আসছি স্কুলের প্রতিটা ক্লাশে সে প্রথম হয়েছে।তার বাবা মায়ের ও ইচ্ছা আছে মেয়েকে ভালো জায়গায় পড়ালিখা করানোর।
তারা বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী। তাই নিজের পড়ালিখা চালানোর জন্য প্রাইভেট ও বাসায় দু-একটি ছাগল পালন করতো। গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে অতটা সচ্ছল নয় যে তামান্নাকে সহযোগিতা করবে। তারা আর ও বলেন, গ্রামের মানুষদের জ্ঞ্যান কম হওয়ায় মেয়েদের তারাতারি বিয়ে দিয়ে দেয়। তামান্নার এই সংগ্রামী জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা শিখায়।
জানা যায়, তামান্নার কিছুদিন আগে একটি ছোট ভাই হওয়ায় চিকিৎসা করতে অনেকটা ধারদেনা করতে হয়েছে বাবা সোলায়মান কে। এখনো সেই ধারদেনা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে। এ অবস্থায় তামান্না ভালো একটি কলেজে ভর্তি করাসহ পড়াশোনার খরচ জোগানো হতদরিদ্র বাবার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তামান্না জানায়, বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই বৃত্তি ও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা খরচ জোগাতে সহযোগিতা হতো। কিন্তু এখন কলেজে ভর্তি হতে গেলে টাকা লাগবে। তাই কেউ আর্থিক সহযোগিতা করলে ভর্তি হতে পারতাম। আমার ইচ্ছে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার চেষ্টা করবো। তামান্নার শিক্ষকরা জানান, তামান্না খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। ক্লাশ সিক্স থেকেই দেখছি মেয়েটি খুবই শান্ত, ভদ্র ও মেধাবী। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় লিখাপড়ায় অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকায় আমরা স্কুল থেকে তাকে সহযোগিতা করতাম। বিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়ায় প্রাইভেট ও ফ্রী পড়াতাম। এসএসসি তে সে খুব ভালো ফলাফল করেছে, সমাজের বিত্তবান ও সরকারি সহযোগিতা পেলে তামান্না ও তার পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হবে।
রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম আশরাফুল ইসলাম স্বপন জানান, তামান্না আক্তার একজন মেধাবী ছাত্রী। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্কুলে থাকাকালীন আমাদের স্কুল থেকে তাকে অনেক সহযোগিতা করা হত।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: