পরীক্ষা চলাকালে তিন শিক্ষার্থীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৪১ পিএম

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বেতিল উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালে তিন শিক্ষার্থীকে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় তাদের পরীক্ষা থাকলেও তাদের তা দিতে দেওয়া হয়নি। নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে। শিক্ষার্থীরা জানায় বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জ -এনায়েতপুর সড়কের বেতাল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল সালাম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অনিয়ম দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বিদ্যালয়ের দপ্তরি কর্মচারী, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও বহিরাগত সন্রাসীরা মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্মীদের বেধরক মারপিট করে ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। এ মারপিটে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়।খবর পেয়ে এনায়েতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মানববন্ধকারিদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তিন পরীক্ষার্থীকে আটক করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছে সোপর্দ করে। পরিচালনা কমিটি ওই তিন শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে অভিভাবকদের সামনে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। এ খবর পেয়ে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা স্থানীয় বেলা সাড়ে এগারোটায় আবারো আজুগড়া এলাকায় মানববন্ধ ও বীক্ষভ মিছিল করে। মানববন্ধ চলাকালে পুলিশ বাঁধা দেয়। এ সময় ভিডিও ধারণ কালে সাংবাদিকের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ উপ পরিদর্শক প্রনয় কুমারের সাথে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়।

অভিভাবক আবদুল্লহ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নূর নবী, নূরী খাতুন, অভিভাবক আবদুল হালিম ও আক্তারুজ্জামান।

এদিকে আটক ছাত্রদের সাথে কথা বলতে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির বার্ষিক পরীক্ষা চলা অবস্থায় অফিস কক্ষে শতাধিক লোকজন নিয়ে বৈঠক চলছে। সেই বৈঠকে আটক তিন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে জোরপূর্বক সদা কাগজে পরিচালনা কমিটির পক্ষে মুচলেকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এই দিনে তারে চলা পরীক্ষা থেকে তাদের বিরত রাখা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেয়নি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বৈঠক স্থগিত করে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, মানববন্ধনে নামে কতিপয় শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে তাদের অভিভাবকদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের উপর কোন নির্যাতন করা হয় নি। পরীক্ষা চলা কালে তিন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ রেখে এমন জিজ্ঞাসাবাদ আইন সম্মত কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন এদের ব্যাবস্থা পরে করে হবে। এত মানুষ এক সাথে তিন শিশু শিক্ষার্থীদের এমন জিজ্ঞাসাবাদ আইন সম্মত কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা বক্তব্য নেই।

আটককৃত ছাত্ররা হচ্ছে, নবম শ্রেণীর ইমরান শেখ ও আলিফ হোসেন , সপ্তম শ্রেণীর আবদুল্লহ প্রামাণিক। অপরদিকে আটককৃত আলিফ হোসেনের বাবা আল মামুন বলেন, আমার ছেলেকে কী কারনে আটক করা হয়েছে সেটি আমাকে এখনও জানান হয় নি।

আহত শিক্ষার্থী কাউছার আহমেদ, আজিজুল সরকার, মারুফ হোসেন, হৃদয় হোসেন, আবদুল্লহ প্রামাণিক ও মিলন হোসেন জানায়, বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল সালাম , বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অনিয়ম দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মানব বন্ধন শুরু করি। এসময় বিদ্যালয় কজন কর্মচারী, পরিচালনা কমিটির সদস্য বহিরাগতদের সাথে নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় । এতে আমাদের ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তিনজনকে আটক করে তাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয় নি। তবে পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তাদের আজকের বিষয়ে অটো পাশ দিয়ে দিবো। এসময় তাদের এটি করাতে প্রতিষ্ঠানিক কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তার এরিয়ে যান।

জেলা পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠান হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের কোন গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: