ফরিদপুরে অযত্নে পড়ে রয়েছে গণকবর, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৩ এএম

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অযত্নে পড়ে রয়েছে বেশকিছু গণকবর, সংরক্ষণের জন্য নেই কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অনেকটা অযত্নে, অবহেলায় পড়ে আছে এসব গণকবর। এগুলো সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সারাদেশের মতো মুক্তিপাগল মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকাররা। ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা ভাঙ্গা থানার ক্যাম্প ছেড়ে ভাঙ্গা কুমার নদীর ব্রিজ পার হয়ে ফরিদপুরের দিকে পালিয়ে যান। অসীম ত্যাগ আর রক্তস্নাত বিজয় নিশান উড়িয়ে মুক্তিসেনারা ভাঙ্গা উপজেলাকে মুক্ত করেন। তবে পাক হানাদাররা রেখে যায় হত্যা, ধর্ষণ আর নরকীয় নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র। আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এর স্মৃতিচিহ্ন।

উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের বিবিরকান্দা গ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন লস্কর, ডা. শাহজাহানসহ একই পরিবারের তিনজনসহ বেশ কয়েকজনকে তৎকালীন রাজাকার কমান্ডার জাকারিয়া খলিফার সহায়তায় ভাঙ্গা বাজারে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই স্থানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। ভাঙ্গা পৌরসদরের চন্ডিদাসদি গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রায় ৩২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে।

একই কায়দায় তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে রাজাকার ইমদাদুল হক ইঙ্গুল কাজীর সহায়তায় কয়েকজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় নারী-পুরুষসহ জনকে। উপজেলাকে বিভক্তকারী দীগনগর সেতুর দুই পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা, পাক বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকারদের মধ্যে সংঘটিত হয় একটি ভয়ানক যুদ্ধ। যুদ্ধে শহীদ হন অন্তত ১১ জন। কিন্তু তাদের স্মরণে জাতীয় দিবস ছাড়া কখনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না।

এদিকে ২০০৬ সালে তৎকালীন ফরিদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ জান্দী বধ্যভূমিতে তৈরি করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ। তবে সঠিক পরিচর্যার অভাবে জন্মেছে আগাছা, লতা-পাতা। দিনে দিনে মুছে যাচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভটির নামফলক। শহীদ পরিবারের সদস্য ও ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের বিবির কান্দা গ্রামের বাসিন্দা বাদল মুন্সি সেদিনের ভয়াল স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে ওঠে। চোখের সামনে আমার বাবা, মামা, ভাইকে বর্তমান ভূমি অফিস সংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর তাদের মরদেহগুলো মাটিচাপা দিয়ে রাখে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা মিয়ান আ. ওয়াদুদ বলেন, পাকবাহিনী ও রাজাকাররা সারাদেশের মতো ভাঙ্গায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে বীরমুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে প্রতিরোধ করার পর পাকবাহিনী ভাঙ্গা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শহীদদের স্মৃতি এবং গণকবরগুলো রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো। স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধা আ. আজিজ টুকু মোল্লা বলেন, ভুরঘাটা যুদ্ধসহ বেশ কয়েক জায়গায় পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাঙ্গার চন্ডিদাসদি গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়।

এদিকে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। সেজন্য যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: