জয়পুরহাটের মাঠ ঘাট আলুতে সবুজ, বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:২৭ এএম

আলু উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম জেলা হিসাবে পরিচিত জয়পুরহাটের মাঠ ঘাট এখন আলুর গাছে সবুজ রুপ ধারন করেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩শ ৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হলেও চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে। আলু চাষ সফল করতে ব্যাপক কর্মসূচী নেয় স্থানিয় কৃষি বিভাগ। নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে কৃষি বিভাগ।

এ ছাড়া আগাম জাতের আলুর চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। যে আলু বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরাও খুশি। জামালগঞ্জ এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করে আড়াই লক্ষ টাকার আলু বিক্রি করেছেন বলে জানান। রোপা আমন ধান কাটার পরেই কৃষকরা জমিতে আলুর বীজ বোপনের কাজ শুরু করে। বিশেষ করে আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটার পরেই আগাম জাতের আলু লাগানো হয়ে থাকে জেলা সদরের জামালপুর, পারুলিয়া, বনখুর, পুরানাপৈল ও আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ ও পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাট্টা, আয়মারসুলপুর এলাকায়। জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ বোপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে স্থানিয় কৃষি বিভাগ। উপজেলা ভিত্তিক আলু চাষের মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৬ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৮ হাজার ১০৬ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬১১ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমি। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হয়ে থাকে। এবার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৪ মেট্রিক টন আলু।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, আলু চাষ সফল করতে জেলায় সারের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। নভেম্বর মাসের মজুদ সারের পরিমান ছিল ইঊরিয়া ৩ হাজার ৭৫৭ মে. টন, টিএসপি ২ হাজার ৩৬৬ মে.টন, এমওপি ৩ হাজার ৩৫০ মে. টন ও ডিএপি ২ হাজার ১৭৫ মে. টন। এর সঙ্গে ডিসেম্বর মাসের চাহিদার মধ্যে রয়েছে ইঊরিয়া ৫ হাজার ৩৪৫ মে. টন, টিএসপি এক হাজার ৩১৮ মে. টন, এমওপি এক হাজার ৯৩১ মে. টন ও ডিএপি এক হাজার ৭৮৮ মে. টন সার।

বিএডিসি’র বীজ বিপনন বগুড়া ও জয়পুরহাট অ লের উপ-পরিচালক মোহা: জাকির হোসেন বলেন, উন্নত জাতের আলুবীজ ডিলার পর্যায়ে প্রতিকেজি প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি প্রকার ভেদে সাড়ে ৩০ টাকা থেকে সাড়ে ৪২ টাকা পর্যন্ত বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়। ভালো মানের কারণে বিএডিসির উচ্চ ফলনশীল এ্যাস্টোরিক জাতের আলুবীজের চাহিদা একটু বেশি বলে জানান, উপ-পরিচালক মোহা: জাকির হোসেন। জেলায় আলু চাষ সফল করতে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষন সহ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আব্দুল করিম। আবহওয়া ভালো থাকায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।

জয়পুরহাটের আলু উন্নত মানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯ টি দেশে রপ্তানী করা হয়েছিল। প্রাচীন বরেন্দ্র অ ল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে। ফলন ভাল হওয়ায় জেলায় গ্যানোলা, কারেজ, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টোরিকস, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। জেলার ১৫ টি কোল্ড ষ্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ মে: টন আলু সংরক্ষন করা সম্ভব হয় বলে জানায়, কৃষি বিভাগ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: