জামালপুরের সার পাচার হচ্ছে অন্য জেলায়

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৪৯ এএম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী বাজার থেকে অবাধে পাচার হচ্ছে সার। কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত সার এই উপজেলায় না দিয়ে অন্য উপজেলায় বিক্রি করছে একটি চক্র। চক্রটি কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলাকে বেছে নিয়েছে সার বিক্রির জন্য। সানন্দবাড়ী বাজার থেকে দূরত্ব কম হওয়ায় তারা এখানেই বিক্রি নিরাপদ মনে করে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় সার পাচার বা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না সানন্দবাড়ী বাজারের সার ব্যবসায়ীরা। তারা অবাধে খুরচা ও পাইকারী ভাবে সার পাচার করছেন পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার নয়ারচর বাজারসহ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৮ হাজার ৮৩৮ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে। তার জন্যে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে সারের প্রয়োজন ছিল ইউরিয়া ১১ হাজার ৪৩৫ মে.টন, টিএসপি ৩ হাজার ৯৭০ মে.টন, এমওপি ৪ হাজার ৯৬৩ মে.টন, ডিএপি ৪ হাজার ২৬৮ মে.টন। বরাদ্দ দেওয়া হয় ইউরিয়া ৬ হাজার ৮৪২ মে.টন, টিএসপি ২ হাজার ২৯৯ মে.টন, এমওপি ২ হাজার ১৬ মে.টন, ডিএপি ৩ হাজার ১৯১ মে.টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরেও আনুপাতিক হারে প্রায় সমান পরিমাণ সার বরাদ্দ পাবে বলে জানান উপজেলা উপজেলা কৃষি বিভাগ। প্রাপ্ত সার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যে এ উপজেলায় বিসিআইসির অনুমোদিত ২১ জন ডিলার রয়েছেন।

বর্তমানে এ উপজেলায় সারের সংকট না থাকলেও আবাদী জমি ও ফসলের পরিমাণের আনুপাতিক হারে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার পাচ্ছেন না বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারগণ। তারা প্রাপ্ত সার প্রকৃত কৃষকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপিতে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে কৃষকদের মাঝে ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করছেন। কিন্তু নিয়মের ফাঁকফোঁকরে খোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে সার যাওয়ায় বাধাহীন ভাবে অন্য জেলায় যাচ্ছে সার। ফলে এ উপজেলায় সারের জোগান হ্রাস পাচ্ছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে সারের চাহিদা।

অন্যদিকে এ উপজেলার বাজারগুলোতে সারের সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত যোগান নেই। চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কম হলেও ঘাটতি কাটিয়ে ওঠছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। এমতাবস্থায় ঘাটতির বাজারের সার অন্য জেলায় পাচারে চলতি বোরো ও ভূট্টা মৌসুমে এ উপজেলা সারের সংকট সৃষ্টি করবে বলে কৃষকদের ধারণা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূক্তভোগী বলেন, তিনি এ উপজেলার প্রকৃত কৃষক। ১ বস্তা সার কেনার জন্যে বিসিআইসির চরআমখাওয়া ইউনিয়নের সার ডিলার মেসার্স মুক্তারুল ইসলামের বিক্রয় কেন্দ্রে গেলে তাকে সার না দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়। অথচ ওই ডিলার ফুলছড়ির জিগাবাড়ী, মোল্লারচরের কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন। উপজেলার কৃষক হয়েও তিনি তাকে সার দেননি বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সানন্দবাড়ী বাজার থেকে প্রতিনিয়ত গাইবান্ধার ফুলছড়ির চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে সার যাচ্ছে।

পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে সানন্দবাড়ী বাজারের সার ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, তিনি স্থানীয় পাইকারী বাজারসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা বকশিগঞ্জ বাজার ও উপজেলার তারাটিয়া বাজারের সার ব্যবসায়ী মুধু মিয়ার কাছ থেকে পাইকারী সার ক্রয় করেন। সে সার স্থানীয় কৃষক ছাড়াও রাজিবপুরের নয়ারচরের তারা বেপারীসহ অন্যদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা বেপারীর ভূট্টার প্রজেক্ট রয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাতে ৩০ বস্তা সার ভ্যানে করে পাঠিয়েছেন নয়ারচরের তারা বেপারীর কাছে।

তিনি আরও বলেন, নয়ারচরের ব্যবসায়ীসহ গাইবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকরা এ বাজার থেকেই সার ক্রয় করেন।

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের ভাষ্য, সার বিতরণে দূর্নীতি এড়াতে প্রকৃত কৃষকদের জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি স্বাক্ষরসহ লিখিত সুপারিশ করলে ডিলারগণ ওই কৃষককে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার দেন। নিয়মের ফাঁকফোঁকরে খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে সার যাওয়ায় এমন অনিয়ম হচ্ছে। তবে বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারগণ নিয়মানুযায়ী কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ করছেন।

চরআমখাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো জিয়াউল ইসলামের ভাষ্য, বিসিআইসির ডিলারগণ যে পরিমাণ সার বরাদ্দ পায় তা প্রকৃত কৃষকদের মাঝে বিক্রি হচ্ছে। ডিলারগণ সার বিতরণ করে মজুদ রেজিষ্টার মিলান। তার পরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর আজাদ জানান, সার পাচারের বিষয়টি তিনি জানেন না। অন্য জেলায় সার পাচার অপরাধ। এ অপরাধ দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: