নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সক্রিয় চোরাচালান চক্র: ৪৬ গরু জব্দ

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:২৯ এএম

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যেও সক্রিয় আছে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত ৫ মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভাল্লুক খাইয়া, চাকঢালা ও দৌছড়ির পয়েন্টে চোরাই পথ দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরু-মহিষ এবং বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। এসব অবৈধ পণ্যের চালান নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন চোরাকারবারি চক্র।

বিজিবি ও প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৬টি গরু জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে চোরাই পথে আনা গরুগুলো স্থানীয় তীরেরডিবা ও রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে রাখা হয়। খবর পেয়ে বিজিবি সেখানে অভিযান চালিয়ে গরুগুলো জব্দ করে। তবে গরু চোরাচালানকারী কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।

নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় খামারি কবির হোসেন বলেন, চোরাই পথে গরু আসায় সংকটের মুখে পড়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ৫টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজারের রামু, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের খামারিরা। নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার বাইশারী ও গর্জনীয়ার বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চোরাই গরু আসায় দেশি গরুর দাম কমে গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৫টি পয়েন্ট এবং আলী কদমের ৩টি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে গরু আনছে চোরাকারবারিরা।

সীমান্ত এলাকায় চোরা কারবার সম্পর্কে ফুলতলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তাহের বলেন, সন্ধ্যা নামলেই ফুলতলির পথ দিয়ে চোরাই গরু আনার কাজ শুরু হয়। এরপর এশার নামাজের পর রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেলে গরুর পাল এপারে নিয়ে আসা হয়। প্রশাসন ও বিজিবি টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে এসব কাজ।

দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে গরু জব্দের কথা তুলে ধরেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। বিভিন্ন কৌশলে চোরাচালানকারীরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে গরু নিয়ে আসছে। আগেও কয়েক দফায় শতাধিক গরু জব্দ করেছিল বিজিবি।

লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম আরও বলেন, আজ সকালে কুয়াশা ও শীতের মধ্যে মিয়ানমার থেকে অনেকগুলো গরু নিয়ে বাংলাদেশে আসে চোরাকারবারিরা। সীমান্তের তীরেরডিবা ও রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গরুগুলো রাখা হয়। বিজিবি পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে ৪৬টি গরু জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা জঙ্গলে আত্মগোপন করায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় আছে সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারি চক্রগুলো। এর মধ্যে সীমান্তের মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা গরু, মহিষ ও মাদক জব্দ করতে আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছি। গরু চোরাচালান বন্ধে বিজিবি সতর্ক আছে।

অবৈধ চোরাচালান এবং সীমান্ত এলাকায় বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মেহেদি হাসান কবির বলেন, মিয়ানমারের ভেতরের সংঘাতকে কাজে লাগাতে একদল চোরাকারবারি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল নাইক্ষ্যংছড়িতে ৪৬টি গরু জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত। সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং চোরাচালান রোধে বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: