পরিযায়ী পাখির বিচরণে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী জবাই বিল

প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:২৯ পিএম

শীতের শুরুতেই অতিথি পাখির আনাগোনায় মুখরিত জবই বিল। নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে আসতে শুরু করেছে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এই বছরে পাখির সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এর কারন হিসেবে মৎস্য শিকারীদর অবাধ বিচরণ ও ইঞ্জিন চালিত নৌকার বিকট শব্দকে দায়ী করছেন তারা।

প্রতিবছর পাখির কলকাকলী উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসেন জবই বিলে। গত এক বছর পূর্বেও এই বিলের আশপাশে পর্যটকদের বসার তেমন কোন সুযোগ সুবিধা ছিলো না। কিন্তু চলতি বছরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন সহ আইহাই ইউপি চেয়ারম্যান ও শিরন্টী ইউপি চেয়ারম্যানের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় বিলের ধারে পর্যটকদের বসার জন্য মনোরম জায়গা তৈরী করা হয়েছে। সেই সাথে পর্যটকদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৈরী করা হয়েছে অসাধারণ একটি নাম ফলক। যা জবই বিলের নাম খচিত সৌন্দর্যমন্ডিত হওয়ায় পর্যটকদের নজর কাড়বে বলে আশাবাদী স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের মতে উত্তরে ভারত বর্ষের দক্ষিন দিনাজপুর জেলা, দক্ষিনে চাঁপাইনবাব গঞ্জের মহানন্দা নদী ও পুর্নভবা নদী এবং পূর্ব ও পশ্চিমে সাপাহার উপজেলাকে দু’ভাগে বিভক্ত করে বয়ে যাওয়া দিগন্ত ছোঁয়া এই বিলে অতীতে প্রতি শীত মৌসুমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সহ সুদুর সাইবেরিয়া হতে হাজারো অতিথি পাখীর আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে পুরো বিল এলাকা। জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা এ বিলে একসময় পাখী শিকারে কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর হতে সাহেবরা এসে পাখী শিকার করত এই বিলে।

সেসময় সারা বিল জুড়ে ছিল অসংখ্য কচুরী পানা বিলের অধিকাংশ এলাকায় পানির দেখা মিলতানা। সারা বছরে খরা মৌসুমে একবার বিলে মাছ ধরা হত, সেসময় ২০কেজি ৩০কেজি এমনকি এক দেড়মণ ওজনের শৌল,বোয়াল কাতলা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়তে জেলেদের জালে। দেশ স্বাধীনের পর পর মধ্যবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে জাল যার জলা তার নিতী ঘোষনা করায় এলাকার কিছু সংখ্যক অসাধু স্বার্থন্বেষী মানুষ বিলটিকে আবাদি জমিতে পরিণত করার উপায় অলম্বন করে বিল থেকে সমস্ত কচুরীপানা অপসারণ করে ফেলে বিলটিকে মৎস্যশূন্য ও আবাদি জমিতে পরিণত করেন।

পরে ২০০৮সালের দিকে ওই বিল এলাকার যুবক সোহানুর রহমান সবুজ এলাকার বেশ কিছু যুবকদের নিয়ে জবই বিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষন ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন তৈরী করেন। উদ্যোগ নেন পাখি, মাছ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে স্বেচ্ছায় কার্যক্রম। যার ফলে ওই সংগঠন, স্থানীয় জনগণ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে জবই বিল এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে।

জবই বিল বীববৈচিত্র সংরক্ষন ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, প্রতিবছর এ বিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক আসে। শীতে বিলের জীববৈচিত্রের প্রতি খেয়াল না করে তারা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে সারা বিল ঘুরে বেড়ায়। এতে করে বিলে অবস্থানরত পাখির স্বাবাভিক বিচরণে বাধাগ্রস্থ হয়।

জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার চলতি বছরের এক জরিপ মতে এই পর্যন্ত ২৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে জবই বিলে। বিলে আসা পরিযায়ী পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার পাতি-সরালি পাখির বিচরণ করে। সারা পৃথিবী জুড়ে বিপন্ন লালমাথা পাতিভূতি হাস ৮০০ ও চকাচকি পাখি ৬টি শুমারির সময় দেখা গেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, জবই বিলের জীবভেচিত্র সংরক্ষণে সর্বস্তরের মানুষের যেমন আন্তরিকতা রয়েছে তা অক্ষুন্ন থাকলে অচিরেই এই বিল হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: