চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপ-নিবার্চন: মাহিকে নিয়ে তৃণমূল আ.লীগে ক্ষোভ

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:২৩ পিএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) আসন শূন্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ ডিসেম্বর সংসদের স্পিকারের নিকট বিএনপি দলীয় ৬ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরের দিন জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ফলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থেকেই নির্বাচন কমিশন দেশের ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচন ঘোষণা করে ০১ ফেব্রুয়ারি। এরপর হঠাৎ করে সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে বিএনপির এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে গণসংযোগ শুরু করেন মাহি।

এসময় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা ও ভোট চেয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি। মাহির এমন কান্ডে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হটাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সক্রিয় হওয়ায় তা ভালোভাবে দেখছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, আসন্ন ০১ ফেব্রুয়ারী উপ—নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকেই দেয়া হোক নৌকার মনোনয়ন।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গোমস্তাপুর উপজেলা ও রহনপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন নায়িকা মাহিহা মাহি। এসময় মাহির সাথে উপস্থিত ছিলেন, তার স্বামী ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য রাকিব সরকার সে সময় গনসংযোগে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে দোয়া চান।

কিন্তু গত মাস দুয়েক আগেও রাজশাহী-১ (তানোর, গোদাগাড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়ে সেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ শুরু করেন নায়িকা মাহিয়া মাহি।

হঠাৎ করে মাহির মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় হওয়া নিয়ে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাই এ দলের পক্ষে যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিশ্চয় রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বিচার বিশ্লেষণ করেই নৌকার মনোনয়ন দিবেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা চাই, র্দুদিনে যেসব ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে, দলকে সংগঠিত করেছে, এমন একজন নেতাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক। মাহিয়া মাহির সাথে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন আমাদের কাউকে চেনেন না, তেমনি আমরাও তাকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখিনি। নির্বাচনের এক মাস আগে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

রহনপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, মাহির সাথে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোম সংগঠনের সম্পর্ক নেই। পৌর বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীকে তিনি চেনেন না। কর্মীবান্ধব আওয়ামী লীগ নেতার হাতে আমরা নৌকার মনোনয়ন দেখতে চাই। আমরা মাহির সাথে নেই। যেসব নেতা আমাদের পাশে ছিল, আমরাও তাদের সাথে আছি।

আব্দুল কাদের নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে মাহিয়া মাহির মনোয়ন ফরম তুলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ রাজনীতিকে আলু-পটলের মতো পন্য মনে করেছে। যেটা ইচ্ছে হলে বাজারে গিয়ে কিনে নেয়া যায়। রাজনীতিকে এমনটা মনে করা উচিত নয়। এমনটা হলে রাজনীতিবিদদের রাজনীতি করার দরকার নাই। রাজনীতি করার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া রয়েছে। তা অনুসরণ করে মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগে আসার পর এসব কর্মকান্ড করলে তা মানানসই ছিল। যেসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় তাদেরকে নৌকার মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।

সাবেক সংসদ সদস্য ও গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস মোবাইল ফোনে জানান, , একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যে-কারো নৌকার মনোনয়ন চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। মাহির গণসংযোগ ও পথসভা শুরুর পর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাদেরকে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে নৌকার মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন, আমরা তাঁর পক্ষেই কাজ করব।

এবিষয়ে জানতে মাহির স্বামী রকিব সরকারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একটি গণসংযোগে আছি। এখন কথা বলা সম্ভব নয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত এক ডজনের অধিক নেতা। মাহিয়া মাহি ছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছে-জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দ্দার, ভোলাহাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খুরশিদ আলম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান লিংকন, নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা খাতুন, গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা, ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আরা।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী বিভাগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

বিএনপির এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন শূণ্য হওয়ায় উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বলে জানা গেছে দেশের এই জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৪৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান নৌকা প্রতীকে এক লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে হেরে যান। এবার আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন মাহিহা মাহি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: