কমলগঞ্জে খাল-বিলে মাছ ধরার উৎসব

চলমান শুকনো মওসুম শুরু থেকেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবার পানি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্রামেগঞ্জে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। প্রতিটি গ্রামগঞ্জেই এখন মাছ ধরার উৎসব চলছে। ভোর হতে না হতেই শুরু হয় মাছ ধরার পালা। শিশু-কিশোর ও বয়স্ক থেকে শুরু করে সকলেই মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠে। সকলেই উড়ালজাল, টানাজাল, পেলেইনজাল, পলো প্রভৃতি নিয়ে এবং শিশু-কিশোররা খালি হাতেই খালে-বিলে নেমে পড়ে। যেখানে হাঁটু পানি সেখানে সেচের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর মৎস্য শিকারীরা খালে-বিলে নামছে। বিকাল পর্যন্ত চলে মাছ ধরার এই প্রক্রিয়া। পরে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ হাটবাজারে বিক্রি করেন।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার পৌর এলাকার একটা খালের মধ্যে দেখা যায় ছোট বড় ২০-২৫ জন মিলে সেচ দিয়ে মাছ ধরছে। সেখানে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ধরাপড়ে।
একসময় খাল-বিল,পুকুর-ডোবা আর ক্ষেত-খাল শুকিয়ে এলে থালা-বাটি দিয়ে চলে সামান্য পানি সেচার কাজ। আর পুকুর-ডোবার পানি সেচা হয় পাম্প মেশিন দিয়ে। এরপর চলে মাছ ধরার উৎসব। রীতিমতো আনন্দ উল্লাস করে লোকজন পুকুর-ডোবা, খাল-বিলের শূন্য পানির কাদার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনে একের পর এক মাছ। সেচ দেয়া পুকুরে চাষ করা মাছের পাশাপাশি পাওয়া যায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আর ডোবায় মিলে শোল, টাকি, পুঁটি,, কৈ, মাগুর, শিং, ট্যাংরাসহ দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষাকাল শেষ হলে পানি কমে গেলে এই এলাকার নিচু জমিগুলোতে এমন মাছ ধরার উৎসব চলে। সেই উৎসবে মাছ ধরতে মেতে উঠে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই। কাদা পানিতে নেমে কে কতো বেশি মাছ ধরতে পারে, এই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
তারা জানান, আগে এমন করে নানা জাতের দেশীয় মাছ প্রচুর ধরা গেলেও এখন আর সেদিন নেই। নেই মাছের সে প্রাচুর্য। প্রতিনিয়ত মাছের অভয়ারণ্য কমে যাওয়ায় আগের মতো জমে ওঠে না মাছ ধরার উৎসব। দেশীয় মাছের উৎসগুলো ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, দেশি কই, শিং, মাগুর, ভেদা, বায়লা, পাবদা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছের প্রজননের সময় মা মাছেরা ডিম ছাড়ার জন্য বৃষ্টির পানিতে ভেসে গিয়ে ধান ক্ষেত, ডোবা, নালা, খাল-বিলে আশ্রয় নেয় এবং ডিম ছাড়ে। খাল, বিল, ডোবা, নালায় এখন ছোট বড় হরেক প্রজাতির দেশি মাছ বড় হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। কিন্তু এলাকাগুলোতে ছোট ছোট জাল ও চাঁই (ফাঁদ) পেতে ছোট ছোট মাছসহ ডিমঅলা মাছগুলো ধরে অহরহ বিক্রি করছে হাট-বাজারে।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার সৌখিন মাছ শিকারী বাবুল মিয়া বলেন, একসময় অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন একেবারেই কমে গেছে। বিভিন্ন বিলের নিচু এলাকায় ঘের তৈরি হওয়ায় মাছের আশ্রয়স্থল নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া আগের মতো পানি না হওয়ায় মাছ কম পাওয়া যায়। তাছাড়াও ধানে বিষ প্রয়োগ, মা মাছ নিধনসহ বিভিন্ন কারণে মাছের প্রজনন কমে গিয়েছে। দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ রক্ষায় বিভিন্ন বিলে অভয়াশ্রম তৈরি করা প্রয়োজন।
কমলগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান বলেন, মাছ ধরা উৎসব গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্য। শীতের সময় আসলে গ্রামগঞ্জে মাছ ধরা দেখা যায়। শীতের সময় মাছের প্রজনন করে না। বিশেষ করে বৈশাখ, জৈষ্ট আষাড় মাসে মাছ প্রজনন করে থাকে। এ জেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় বেশি। তবে নদীতে বিষ প্রয়োগ,পানি কম হওয়াসহ নানা কারণে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। তিনি আরোও বলেন, কেউ অবৈধ ভাবে নদীতে বা খালেবিলে মাছ শিকার করলে আমরা মাঝে মাঝে অভিযান করে জড়িমানা করি।’
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: