শেরপুর জেলার উন্নয়নে ৮ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২২ পিএম

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে দেশের সমন্বিত উন্নয়ন দরকার। তাই শেরপুর জেলার সার্বিক উন্নয়নে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরী। সে লক্ষে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

স্মারকলিপি প্রদান করেন শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, শেরপুর মডেল কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মারুফুর রহমান ও মেহেদী হাসান প্রমুখ।

স্মারক লিপি প্রদান শেষে প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু একটি জেলাকে অন্ধকারে রেখে কখনো একটি দেশের সার্বিক উন্নয় গড়ে তোলা সম্ভব না। এমনকি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করাও সম্ভব না। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে সারাদেশকে যেভাবে প্রযুক্তিবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন সেটি থেকে বঞ্চিত হয়েছে শেরপুর। জেলায় যোগাযোগের জন্য এখনো কোনো রেলপথ নির্মাণ করা হয়নি। গড়ে তোলা হয়নি কোন প্রযুক্তিবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ।

শিল্প উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার জন্য নেই কোন প্রযুক্তিবান্ধব শিল্প জোন। স্থলবন্দর থাকলেও এখনো কোনো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন হয়নি। পর্যটনে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন জেলা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। আমরা চাই সরকার শেরপুর জেলাকে স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গড়ে তুলুক। আমরা শেরপুরের জনগণ কখনো সরকারের কাছে খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য আন্দোলন করি নাই। কৃষি খাতে এখনো ২৫ শতাংশ আমরা যোগান দিয়ে থাকি। শেরপুরে প্রায় ৬ শতাধিক অটো হাস্কি রাইস মিল আছে কৃষিখাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে কৃষি বিপ্লব গড়ে তোলা হয়নি। উন্নয়ন বলতে কেবলমাত্র প্রশাসনের কিছু উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য শেরপুর জেলাকে যেভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল সেটি করা হয়নি।

স্মারকলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, শেরপুরের উন্নয়ন হোক সেটা আমিও চাই। বিস্তারিত তথ্য এবং বক্তব্য শুনে তিনি আশ্বস্ত করে আরো বলেন, স্মারকলিপিটি আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিব।

স্মারক লিপিতে জেলার নাগরিকরা বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে শেরপুর জেলা। ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সালে শেরপুরকে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে শেরপুর জেলার উন্নয়নের প্রদিপও নিভে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে শেরপুর জেলাকে ৬১তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাই শেরপুর জেলাকে আধুনিক ও উন্নত জেলাগুলোর সমকক্ষ করে গড়ে তুলতে আমাদের ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করছি।

১) ঢাকা থেকে যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরের নকলা উপজেলার মধ্য দিয়ে শেরপুর সদর পর্যন্ত রেল সড়ক নির্মাণ। যা পরবর্তীতে শ্রীবরদী, বকশীগঞ্জ, রাজিবপুর ও রৌমারী পর্যন্ত প্রশস্ত করা যেতে পারে।

২) আধুনিক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা।

৩) শেরপুর যেহেতু কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা তাই এখানে কৃষি, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি আধুনিক উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।

৪) শেরপুর শহরের নাগরিকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে শেরপুর পৌরসভার পাশাপাশি নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক শহরে উন্নীতকরণ করা।

৫) ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকে লক্ষ্য রেখে সরকার সারাদেশে ১০০ টি আইটি পার্ক স্থাপন করছে। শেরপুর জেলায় কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সীমান্ত রক্ষায় প্রযুক্তির উন্নয়নে একটি আইটি পার্ক স্থাপন করা।

৬) ১৯৯৬ সালে নাকুগাঁও স্থলবন্দর চালু হলেও এখানে যাতায়াতের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। নাকুগাঁও স্থলবন্দরকে আধুনিক উন্নত স্থলবন্দরে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৭) শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলাকে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলা।

(৮) শেরপুর জেলার দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ যারা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং যাদের কারণে শেরপুর জেলার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: