স্বপ্ন নীড়ে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে উচ্ছ্বসিত কচি ও এনামুল

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: “আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার" এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে সারাদেশের ৬৪ টি জেলার ৪৯২ টি উপজেলায় এ বাড়িগুলোর নির্মাণ করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় তিনটি ধাপে ৬৫৮ টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। চতুর্থ ধাপে আরও ৭৫টি বাড়ি নির্মান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সঠিকভাবে ও সঠিক নিয়মে নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোমস্তাপুর ও জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছেন। দু’শতক জমির মালিকানা সহ সেমিপাকা দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ি করে দেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে দেয়া হয়েছে রান্নাঘর, টয়লেট, সুপেয় পানি সহ বিদ্যুৎ সংযোগ। আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষের জন্য রয়েছে যথেষ্ট জায়গা। পরের ভিটায় বসবাস করে দিন কাটছিল প্রতিবন্ধী কচি বেগম আর এনামুলের। শারীরিকভাবে তারা প্রতিবন্ধী। একটি বাড়ি পাওয়ার জন্য তারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। এক সময় নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের।

তাদেরকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উপহারের‌ বাড়ীতে। বাড়ী পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেনিও কচি বেগম আর এনামুল হক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ী পেয়ে তারা ধন্যবাদের পাশাপাশি দোয়া করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের পূণর চাঁদপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত প্রতিবন্ধী কচি বেগম আর এনামুলের কথা। বাড়ী পাওয়ার আগে তারা বসবাস করতো পরের জমিতে। এনামুল থাকতো রেলওয়ের বস্তিতে আর কচি বেগম ছিল রহনপুরের ষাড়বুরূজ এলাকায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুনের সহযোগিতায় এখন তাদের ঠিকানা হয়েছে রহনপুর ইউনিয়নের পূণর চাঁদপুর গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ীতে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাওয়া প্রতিবন্ধী কচি বেগমের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, আমি একজন অসহায় মহিলা। জন্মের দুই বছর পর‌ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমার দুই পা অক্ষম হয়ে যায়। আমি স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারিনা। সংসারে আছে আমার বয়স্ক মা আর বাবা হারা একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান। স্বামী তিন মাস আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সংসার চালানোর জন্য কোন টাকা পয়সা আমাকে দেয় না। বর্তমানে সংসারে একমাত্র আয় করা ব্যক্তি এখন আমার বয়স্ক মা। তবে সংসার চালানোর জন্য আমিও বাড়িতে হাঁস=মুরগি পালন করছি। আমি সেলাই মেশিন চালাতে পারি।

কিন্তু সেলাই মেশিন কেনার কোন সামর্থ্য আমার নেই। ইউএনও স্যার আমাকে একটা সেলাই মেশিন দিতে চেয়েছেন। আমাদের ইউএনও স্যারটা খুব ভালো। আমি যেদিন বাড়ির জন্য স্যারের দোতলা অফিসে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলাম। আমার মেয়েকে নিয়ে, তখন স্যার খবর পেয়ে আমার অবস্থা দেখে নীচে নেমে আসে‌ আর আমাকে একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেন। আমি স্যারের জন্য আজ বাড়ি পেয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। স্যারকে যেন আল্লাহ ভালো রাখেন এই দোয়া করি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন উনাকেও ভালো রাখেন। আমার বাড়ির ব্যাবস্থা করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কথা হয় আরেক প্রতিবন্ধী এনামুল হকের সাথে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পেয়ে আমি খুব খুশি। আমাদের ইউএনও স্যার আমার বাড়ির ব্যবস্থা করে
দিয়েছেন। আমার মাথা গোঁজার কোন ঠাই ছিল না। আজ আমার একটা পাকা বাড়ি হয়েছে। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আল্লাহ যেন ইউএনও স্যারকে খুব ভালো রাখেন। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন উনাকেও সুস্থ রাখেন। পরিবারে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও আমার স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের বসবাস।
আমার ছোট ছেলেটি স্কুলে পড়াশোনা করে। সংসারে আয় উপার্জন করার মতো আমি নিজেই। অনেক বয়স হয়েছে আমার। তাই আমার ইচ্ছে একটি ছোট মুদি দোকান দিয়ে, যেন বাকি জীবনটা সুখে স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারি। এজন্য আমি প্রশাসন সহ সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের শুভদৃষ্টি কামনা করছি।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে উপকার ভোগীরা কেমন আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সোহরাব জানান, আমি প্রতিনিয়ত উপকার ভোগীদের খোঁজ খবর রাখছি। বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী তাদের প্রতি আমি আন্তরিকতার সহিত কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমি তাদের অনেক সহযোগিতা করেছি। আগামীতেও করব এ আশ্বাস আমি তাদের দিয়েছি। প্রতিবেশীদের সাথে কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে। আমি দ্রুততার সহিত সমাধান করার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন বলেন, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের মত একটি মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরাসরি সম্পৃক্ত করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। উন্নত মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে সুবিধাভোগীরা যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে, এজন্য সবসময়ই তাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়।

কেউ কোন সমস্যায় পড়লে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে আমরা তাদের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবারগুলো খুব খুশি, কেননা তাদের না ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই, না ছিল নির্দিষ্ট ঠিকানা। এখন তারা নির্দিষ্ট ঠিকানা পেয়েছে, ফলে শান্তিতে সুখের নীড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে। তাইতো তারা চিরকৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: