সিলেটের পেট্রোল পাম্পের ধর্মঘটের নেপথ্যে কারন

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২১ পিএম

তিনটি ডিপোতেই তেল সংকট। চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না। এই অবস্থায় সংকট কাটাতে নিজেদের পরিবহনে আশুগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল থেকে তেল আনতে হচ্ছে। এতে রয়েছে পদে পদে ভোগান্তি। সিলেটে তেল নিয়ে আসার পর সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে হয়। এতে লিটারে কেউ এক টাকা আবার কেউ দুই টাকা ভর্তুকি দিচ্ছেন। এতে করে হাঁপিয়ে উঠেছেন জ্বালানি তেল বিক্রেতারা। বিভিন্ন দপ্তরে বার বার ধরনা দিয়ে কাজ না হওয়ায় অবশেষে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের দাবি হচ্ছে; চলমান এই সংকট কাটাতে প্রশাসনিকভাবে সবখানেই তারা যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ-ই সংকট দূর করতে এগিয়ে আসেননি।

বাধ্য হয়ে তারা ধর্মঘটে গেছেন বলে জানিয়েছেন। পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স এসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, বুধবার থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ডিপো থেকে তেল নেয়া বন্ধ ও পরবর্তী রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনের মাধ্যমে সিলেটে তেল আসে। নানা কারণে রেলের ওয়াগন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়া ও কোনো কোনো দিন বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পাম্পে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায়, তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্ল্যান্টেই জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হতো।

সরকারি মালিকানাধীন এ প্ল্যান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্ল্যান্টে কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হয়। এতে এখানকার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ডিপোগুলোর কর্মকর্তারা তৎপর হলে এ সংকট অনেকটাই কমে আসতো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটে আবারো জ্বালানি তেল সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। তেল সরবরাহে কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন অজুহাতে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছি। এদিকে গতকাল সিলেটে পদ্মা ও যমুনা ডিপোতে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন পরিবেশ।

সকাল থেকে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠে ওই দুই ডিপো এলাকা। কিন্তু সকালে সেখানে ভিড় অনেক কম ছিল। যমুনা ডিপো’র ম্যানেজার সুমিন বড়ুয়া জানিয়েছেন, সিলেটে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। তার ওখানে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ লিটার ডিজেল আসতো। কিন্তু এখন আসে ৫-৬ লাখ লিটার। ফলে অর্ধেক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

তিনি জানান, রেলের পরিবহন সমস্যার কারণে এমনটি হতে পারে। আমরা ডিপোতে তেল পাচ্ছি কম, বেচা-বিক্রিও কম। স্থানীয় ব্যবসায়ী সানোয়ার আহমদ জানিয়েছেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্র সহ কয়েকটি গ্যাসকূপ থেকে বিপুল পরিমাণ কনডেন্স মিলে। সেখান থেকে অতীতে তেল উৎপাদন হতো। কিন্তু বিএসটিআইয়ের অভিযানের পর গত দুই বছর থেকে সেখানে তেল মিলছে না। সিলেটে স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত তেল উৎপাদন হলেও সিলেটের মানুষ এখন জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে- এর চেয়ে দুঃখের কিছু নেই বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: