তারা যে এমন ষড়যন্ত্র করবে, তা বুঝতে পারিনি: ইয়াসিন আলী

প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম

ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল আংশিক) আসনের উপনির্বাচনে ১৪–দলীয় জোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদের কাছে হেরেছেন।

আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদ ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পীরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় (স্বতন্ত্র) একতারা প্রতীকে ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন এবং ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী ১১ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়ে তিনি জামানত হারিয়েছেন।

নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে ভরাডুবির কারণসহ নানা বিষয় নিয়ে ইয়াছিন আলী কথা বলেছেন প্রতিবেদকের সঙ্গে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে আপনি হাতুড়ি নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এবার এত অল্প ভোট পাওয়ার পেছনের ঘটনা কী?

ইয়াসিন আলী: ২০১৪ সালের নির্বাচনে শরিক দলের নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেয়েছিলাম। এবার তাঁরা অসহযোগিতার পাশাপাশি ষড়যন্ত্র করেছেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির চাওয়া-পাওয়ার একটা বিষয়ও কাজ করেছে। তাঁরা (আওয়ামী লীগ নেতা) হয়তো ভেবেছিলেন, আমি জয়ী হলে ভবিষ্যতে তাঁদের মনোনয়ন পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে ভেতরে-ভেতরে আমাকে হারানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।

এই এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। নির্বাচনে সেই সম্প্রদায়ের একজন প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটাররা এক হয়ে একতারা প্রতীকে ভোট দেন। আর মুসলিম ভোটারের একটা অংশ চলে যায় লাঙ্গলের দিকে। তবে এত কম ভোট পাব—এটা ভাবিনি। আওয়ামী লীগের ওপর অনেক বেশি ভরসা করাটাই আমাদের ভুল ছিল। তারা যে এমন ষড়যন্ত্র করবে, তা বুঝতে পারিনি।

আজকে যে আমার পরাজয় হলো, এটা শুধু আমারই পরাজয় হলো না; এখানে ১৪–দলীয় জোটেরও পরাজয় হলো। আর জোটের পরাজয় মানে আওয়ামী লীগেরও পরাজয়।

প্রচারণার শুরুতে আপনি আওয়ামী লীগের অসহযোগিতার কথাটি জানিয়েছিলেন। কিন্ত কেন ?

ইয়াসিন আলী: ১৪–দলীয় জোটে নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আমরা আশা করেছিলাম, তাঁরা সব সময় আমার পাশে থাকবেন। ভোটের প্রচারণায় অংশ নেবেন। আমরাও সে কথা মাথায় রেখে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু যেমনটি আশা করেছিলাম, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে সেভাবে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় জোটের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিতে সহযোগিতার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে চিঠি দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর নেতারা দু-একটা পথসভা, সমাবেশে থাকলেও স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন না। আর তাঁরাই মাঠে কর্মীদের ঠেকিয়ে রাখেন। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতিই ক্ষতি করলেন।

এবারের নির্বাচন কেমন হয়েছে বলে মনে করেন?

ইয়াসিন আলী: নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ভোট পড়ার হার ও ফলাফলটা অপ্রত্যাশিত হয়েছে। ভোটের শুরুতে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আয়োজনটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। নির্বাচনে হাফিজউদ্দীন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

এ আসনের সব কেন্দ্রে হাতুড়ি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। নির্বাচন করতে নেমে এমন ছন্নছাড়া অবস্থা কেন?

ইয়াসিন আলী: আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশে না পেলেও আমরা শুরু থেকেই নিজস্ব পরিকল্পনা করেই প্রচারণায় নেমে পড়ি। হাতে কম সময় থাকায় সব এলাকায় গণসংযোগ করার সুযোগ হয়নি। এরপরও চেষ্টা করে গেছি। প্রায় সব কেন্দ্রেই হাতুড়ির পোলিং এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। ভোটের পরিস্থিতি দেখে হয়তো তাঁদের কেউ কেউ দায়িত্ব ছেড়ে চলে এসেছেন।

নির্বাচনে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে ভোটের মাঠ দখলে নেওয়া হয়েছে, এটা এলাকার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে?

ইয়াসিন আলী: এ নির্বাচন ঘিরে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ দেখলাম। এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাঁরা আওয়ামী লীগ করেন, তাঁরা এক হয়ে তাঁদের সম্প্রদায়ের এক প্রার্থীর পক্ষে নেমে পড়লেন, যার প্রভাব ভোটের ফলাফলে পড়ল। এটা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হবেন কী?

ইয়াসিন আলী: আমাদের দলে কেউ চাইলেই প্রার্থী হতে পারেন না। কে কোথায় প্রার্থী হবেন, তা কেন্দ্র নির্ধারণ করে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত দিলে তখন আমি পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখব।

আপনার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের আপনি কি কিছু বলতে চান?

ইয়াসিন আলী: তাঁদের কাছে আমার প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে তাঁরা ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের বিচার করে তাঁকে মূল্যায়ন করবেন। আর এই কঠিন সময়ের মধ্যে যাঁরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া এই আসনে ১ ফ্রেরুয়ারী বুধবার ভোট হয়। নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাফি আল আসাদ (আম), বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল) ও স্বতন্ত্র হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র রায় (একতারা) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজউদ্দীন আহমেদ ৮৪ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোপাল চন্দ্র রায় (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩০৯টি ভোট।

এই উপনির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন চারজন প্রার্থী। জামানত হারানো প্রার্থীদের তালিকায় আছেন ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী ইয়াসিন আলী তিনি হাতুড়ি প্রতীকে ১১ হাজার ২৫৬, জাকের পার্টির প্রার্থী এমদাদুল হক গোলাপ ফুল প্রতীকে ২ হাজার ২৫৭, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী সাফী আল আসাদ আম প্রতীকে ৯৫৩ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম টেলিভিশন প্রতীকে ১ হাজার ৩৮২টি ভোট পেয়েছেন। সর্বনিম্ন ভোট পেয়ে আইন অনুযায়ী জামানত হারিয়েছেন তারা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: