‘বন্ধু কী খবর বল, কতদিন পর দেখা’

প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

ভবিষ্যত গড়ার সিঁড়ি মশৃণ করতেই পৃথক হয়ে গিয়েছিল তাঁদের গন্তব্য। বন্ধুর সঙ্গে ‘দেখা-দেখিটা কারও কারও জীবনে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সামাজিক মাধ্যমগুলোতেই। কারও তো আবার-স্কুল জীবনের শেষ দিনে পথটা যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল তারপর আর মুখ দেখা-দেখি হয়নি। সেই সমস্ত হারিয়ে যাওয়া পথগুলো ফের পুরোনো মোহনায় ফিরেছিল চিরচেনা প্রাঙ্গণে।

বহুদিন পর কারো বা বহু কাল পর প্রিয় মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এসে তারা যেন ফিরে পেয়েছে সেই ‘নীল ইউনিফর্মে’ বন্দি থাকার সোনালী দিনগুলোতে। উপলক্ষ একটাই প্রাক্তনদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। শুক্রবার এই দিনটিকে উদযাপন করে তাঁরা।

তারা সবাই যে একটা সময় এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, পাশাপাশি বসতেন ক্লাসরুমে। বহুদিন পর স্কুলে ফেরায় স্কুল প্রাঙ্গণের এপাশ-ওপাশে প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল অজস্র আবেগি সংলাপ।

তার কোনোটা এমন- ‘বন্ধু কী খবর বল, কতদিন পর দেখা,’ ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম আমরা, আজ চেনায় যায় না’, ‘এটাই না ছিল আমাদের সেই ক্লাসরুমটা, আজ রং লেগেছে তার দেয়ালে-দেয়ালে।’

মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই বিদ্যালয়টির বয়স প্রায় দেশড় বছর। ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম অ্যালোমোনাই এসোসিয়েশন অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলনী। তাই উৎসবের মাত্রাটা ছিল একটু বেশিই।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মো. এনায়েত করিম রাসেল, স্বরণিকা উপ-কমিটির উপদেষ্টা মো. মঈন উদ্দিন, আহ্বায়ক দিলওয়ার হাসান, গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ছারোয়ার ছানু, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মাকসুদা ইয়াসমীনসহ আরো অনেকেই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সফল করতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

পুনর্মিলনী উপলক্ষে স্মৃতিচারন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আয়োজনে বাকি ছিল না কিছুই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ জাহিদ মালেক। এসময় মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নাইমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ- ২ আসনের সাংসদ মমতাজ বেগম, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ,পুলিশ সুপার গোলম আজদ খান প্রমুখ।

পুনর্মিলনী উপলক্ষে এদিন সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন প্রাক্তন আর বর্তমান ছাত্রীরা। প্রাক্তন ছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। অনেকেই আছেন প্রবাসে, তারাও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এই মিলনমেলায়। সেই সাবেকরা যেন খুঁজে ফিরছিলেন তাদের স্কুল জীবনের সেইসব স্বর্ণময় দিনগুলো। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই ভিড় আর চোখে-মুখে উচ্ছাস।

সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশে চলছে মুঠোফোনে ক্লিক ক্লিক, দেদারসে উঠছে সেলফি-ছবি। পেছনের দৃশ্যপটে কোথাও বিদ্যালয় তো, কোথাও আবার মঞ্চস্থল। ফেলে আসা ক্লাসরুম, শিক্ষক আর হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা মিলে হুড়মুড়িয়ে বইতে থাকে গল্পের স্রোত।

বিদ্যালয়ের ১৯৭৪ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী সাব্বিরুল ইসলাম সাবু। তিনি এখন কালের কণ্ঠের সাংবাদিক হিসাবে যু্ক্ত আছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে স্কুলের শেষ দিনের কথা। সেদিন বন্ধুকে ছেড়ে যাওয়ার সময় বলেছিলাম একসঙ্গে থাকার। দেখা হবার। কিন্তু বাস্তবতার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি এরপর থেকে। পুনর্মিলনীতে এসে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যিই নস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা।’

সারাদিন বিভিন্ন কার্যক্রম শেষে বিকাল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধান আকর্শন হিসাবে থাকে নগর বাউলের পরিবেশনা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: