সনদ জালিয়াতির সেই শিক্ষক অবশেষে দুদকের জালে ধরা

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া পৌর সদরে অবস্থিত আলহেরা একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলাম মিন্টুসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অবৈধ উপায়ে জাল জালিয়াতি মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে সরকারি কোষাগার থেকে ১৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭২৭ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক মো. আ. মজিদ, সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম মিন্টুর বিরুদ্ধে গত ২৬ ডিসেম্বর দুদক সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ বুলু মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদক তদন্ত নং- ২০ (ময়মন)।

সূত্রে জানা গেছে, আলহেরা একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১১ সালে আজহারুল ইসলাম মিন্টুকে সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের পর তার পদের বিপরীতে এমপিও ভুক্তির আবেদন করেন। ২০১২ সালে নভেম্বর মাসে তার এমপিও ভুক্তি হয়। ২০১৯ সালে ২০ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অডিট চলাকালে তিনি অসুস্থ্যতার ভান করে অডিট কমিটির কাছে হাজির হয়নি। এরপর থেকে তাঁর নিবন্ধন সনদ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। শিরোনাম হয় বিভিন্ন খবরের কাগজে। বিষয়টি দুুদক আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহা পরিচালকের নির্দেশে হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগ তদন্ত করে গত নভেম্বর মাসে তাঁর বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়।

দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম মিন্টু ২০১০ সালে ৬ষ্ঠ শিক্ষক নিববন্ধন সনদ দিয়ে চাকুরিতে যোগাদান করেন। নিবন্ধন পরীক্ষার রোল নম্বর ৩২১১৬৮৪৬ রেজিঃ নং-১০০০০২৩০৯২। দুদক উক্ত রোল ও রেজিস্টেশন নম্বর এনটিআরসিএ যাচাই বাছাই করতে প্রেরণ করেন। এনটিআরসিএ যাচাই বাছাই নিবন্ধন সনদটি জালিয়াতি প্রমাণিত হয়। ভূয়া নিবন্ধন সনদে চাকুরী নিয়ে গত ২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সরকারী কোষাগার থেকে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৭ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত করেন। দালিলিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়েরপূর্বক মামলার আরজিসহ এনটিআরটিসিএ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ ও সভাপতিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

প্রধান শিক্ষক/ সম্পাদক মোঃ আঃ মজিদ, তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক মোঃ জসিম উদ্দিন উক্ত সনদ জাল জানা সত্ত্বেও তাকে বেতন ভাতা উত্তোলনে সহায়তা করেন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ফৌজধারী মামলা দায়ের হতে বিরত থাকেন। দুদকের অনুসন্ধানকালে মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম মিন্টু জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক (গণিত) নিয়োগ লাভপূর্বক বেতন-ভাতাদি বাবদ উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত ও তৎকর্মে সহায়তার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডবিধি ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন,ভূয়া নিবন্ধনের মাধ্যমে চাকুরী নেওয়ার অভিযোগে আজহারুল ইসলাম মিন্টুর বিরুদ্ধে ডিজি অফিস তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে ইতিমধ্যে তাঁর বেতনাধি বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুদক মামলা করার প্রেক্ষিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ ধার্য্য করেছে। দুদকে মামলা হওয়ার পরে আজাহারুল ইসলাম মিন্টু বিদ্যালয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে কী না এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, সেটি আদালতের রায়ের উপর নির্ভর করবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে যেটি প্রতিয়মান হয়েছে তাঁকে সেইফ করার কোন ধরণের সুযোগ নেই।