বিস্তীর্ণ পাহাড় জুড়ে আমের মুকুলে দোল খাচ্ছে চাষিদের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:০১ পিএম

মানিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ি জনপদের বিস্তীর্ণ বাগান জুড়ে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে সুভাসিত ঘ্রাণ। প্রকৃতির নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। সেই সাথে হালকা বাতাসে মুকুলের সঙ্গে দোল খাচ্ছে চাষি ও বাগান মালিকের স্বপ্ন। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও আমরুপালি, কাটিমন, বারি-৪, ব্যানানাসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছে মুকুল এসছে। আর আমের মুকুল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। আর পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মুকুলে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাটনাতলী, যোগ্যাছোলা, তিনটহরী ও মানিকছড়ি (সদর) ইউনিয়নের বিভিন্ন ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের আম বাগান গুলোতে মুকুলের চাপে নুয়ে পড়েছে গাছের ঢাল। সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় রোপিত গাছের সবুজ পাতা গুলো ঢেকে রয়েছে মুকুলে। পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা এসব বাগানে নিয়মিত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও চাষাবাদের সাথে জাড়িতরা। মুকুল ও ফল টিকিয়ে রাখতে দিনরাত কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির উপর ভরসা করছেন তারা। অনুকূল আবহাওয়া ও আমের মুকুলে দোল খাচ্ছে তাদের লালিত স্বপ্ন।

উপজেলার সবচেষে বড় আম বাগান মালিক হিসেবে পরিচিত বাটনাতলী ইউনিয়নের সেম্প্রুপাড়া এলাকার মো. তাহের মিয়া। তিনি জানান, এ বছর প্রায় ২৭ একর টিলা ভূমিতে আমের বাগান করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনেক বেশি আমের মুকুল এসেছে। বাগানে নিয়মিত বিনিয়োগের পাশাপাশি গুরুত্ব দিয়ে পরিচর্যার কাজে করে যাচ্ছি। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি তার বাগানের শ্রমিকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনে ও বিক্রিতে বিগত বছর গুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি।

বড়ইতলী এলাকার আব্দুর রহিম বাবুল বলেন, গাছে মুকুল আসার আগ থেকেই পরিচর্যা করে আসছি। সেই সাথে বাগানে সেঁচও দিতে হচ্ছে। মলঙ্গীপাড়া এলাকার একটি আম বাগানে সেচ দিচ্ছেন লাব্রে মারমা। তিনি বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না। আর হিমেল বাতাস বইছে। আম গাছের গোড়া শুকিয়ে গেছে। তাই সেচ দিতে হচ্ছে। তবে গত বছর থেকে এবার আম গাছের অবস্থা ভালো আছে। আশা করছি ভালো ফলন হবে।

উপজেলার লেমুয়া লেক গার্ডেন’র পরিচালক মো. মানিক জানান, এ বছর প্রায় ১০ একক টিলা ভূমিতে আমর চাষাবাদ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবার মুকুল আগে এসেছে। সেই সাথে থোকায় থোকায় মুকুলে ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। আশা করছি এ বছর বেশ লাভবান হব।

প্রান্তিক ও মাঝারি বাগান মালিকরা জানান, তুলনা মূলকভাবে এ বছর বেশি ও শতভাগ গাছে আমের মুকুল এসেছে। মাঘের মাঝামাঝিতে বেশির ভাগ মুকুল আসায় ঝরে পড়ার আশঙ্কা কম এবং এগুলো স্থায়ী হয়ে থাকে। তাই আগাম মুকুল দেখার তারা অনেক আশাবাদি। আমের মুকুলে দোল খাচ্ছে তাদের স্বপ্ন।

মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অসংখ্য আম বাগান গড়ে তুলেছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। আমের মুকুল আসার শুরু থেকেই চাষিদের প্রয়োজনীয় নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। গত মৌসুমে ৪৩০ হেক্টর টিলা ভূমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৬শ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর লক্ষমাত্রার চেষে অন্তত ২০% বেশি ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই সমেয় চাষি ও বাগান মালিককে সর্ততার সাথে বাগান পরিচর্যারও পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: