কুমিল্লায় একই দিনে মাদ্রাসা শিক্ষকসহ ৩ জনের আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:০০ পিএম

কুমিল্লা বুড়িচংয়ে একই দিনে পারিবারিক কলহ এবং শারিরীক অসুস্থতায় বিষপান করে ও ফাঁসিতে ঝুলে এক মাদ্রাসা শিক্ষক, কৃষক ও গৃহবধূসহ তিন জন আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল আনুমানিক সারে ৯টায় উপজেলার ময়নামতি ইউপির রামপাল গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৩৮) নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে পারিবারিক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে।

বুড়িচং থানাধীন দেবপুর ফাঁড়ী পুলিশের এসআই রুহুল আমিন জানান, খবর পয়ে সকাল আনুমানিক সারে ১১টায় ময়নামতি রামপাল গ্রামের মৃত আলী মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেনের ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বামী দেলোয়ার এর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন দেলোয়ার। তাসলিমা চান্দিনা উপজেলার বারেরা এলাকার ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। দুবছর আগে পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে হয়। তাসলিমার সংসারে ২বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে শরীরে নির্যাতনের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

জিগ্যেসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ইউপি সদস্য জাবেদ হোসেন, স্বামী দেলোয়ার ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে পারিবারিক বিষয়ে সামান্য কথা কাটাকাটি হয় দেলোয়ার ও তাসলিমার। দেলোয়ার মেয়েকে নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে কিছুক্ষণ পরেই প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত বাড়িতে এসে ঘরে স্ত্রী'র ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাবেদ হোসেন ও পুলিশ কে অবিহিত করা হয়।

এর আগে সকাল আনুমানিক ৯ টায় একই উপজেলার ভারেল্লা উত্তর ইউপি'র কুসুমপুর গ্রামের সীমার বাড়ি এলাকা থেকে আজিজ মিয়া (৫৬) নামে এক কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ। সে ঐ এলাকার মৃত নাহা মিয়ার ছেলে। ভিকটিম এর মেয়ের জামাতা আতিক হোসেন এবং স্থানীয়দের বরাত দিয়ে এসআই রুহুল আমিন জানান, আজিজ মিয়া ব্রাইন স্ট্রোক এর পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ধরেই পেটের ব্যথা সহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শারীরিক ও মানুষিক অসুস্থতায় আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় তার মাঝে। এর আগেও কয়েকবার বিষ খাওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানায় মেয়ের জামাতা আতিক হোসেন। সোমবার দিবাগত মঙ্গলবার ভোর রাতের কোন এক সময় কীটনাশক পান করেন। মরদেহের পাশ থেকে কিটনাষকের বোতাল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান এসআই রুহুল আমিন।

এদিকে একই দিন দুপুর আনুমানিক ১টায় উপজেলার বুড়িচং মোকাম ইউনিয়নের আবিদপুর এলাকার কামরুল হাসান টিপু(৩০) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করেছে ফাঁড়ি পুলিশ। কামরুল হাসান টিপু আবিদপুর গ্রামের আবু ইউসুফ এর ছেলে। সে পশ্চিমসিংহ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন বলে জানা গেছে।

পরিবারের বরাত দিয়ে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের এএসআই অসীম ও প্রতিবেশী আবু মিয়া জানান, গত ২ মাস আগে পারিবারিক ভাবে উপজেলার পারুয়ারা গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে কুলসুম আক্তার (২৩) কে বিয়ে করেন কামরুল। বিয়ের কিছুদিন পর যে কোন কারনেই হোক স্ত্রী কুলসুম বাবার বাড়িতে গিয়ে কামরুল কে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। বিষয়টি মেনে নিতে পারেন নি কামরুল। নববিবাহিতা স্ত্রী এভাবে চলে যাওয়ায় বিষন্নতায় ভুগছিলো সে। ধারনা করা হচ্ছে এ কারনেই গত তিন দিন আগে পরিবারের সকলের অগোচরে বিষপান করেন কামরুল। পরিবারে লোকজন টের পেয়ে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ নেয়া হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। বাড়িতে আনা হলে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।

বুড়িচং থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন সত্যি স্বীকার করে জানান, মোকাম, ভারেল্লা উত্তর ও ময়নামতি ইউনিয়ন এলাকা থেকে কামরুল, আজিজ ও তাসলিমা'র লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলেই ধরনা করা হচ্ছে, ভিন্ন কিছু রয়েছে কিনা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বিস্তারিত বলা যাবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: