কাদিয়ানিদের বাড়িঘরে হামলা, আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা

প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২৩, ০৯:২০ পিএম

পঞ্চগড়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ এবং বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষনা সহ তাদের সালানা জলসা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের মোড়ে স্থানীয় কয়েক ইসলামি সংগঠনের সদস্যরা জড়ো হয়।

এরপর সেখানেই চারঘন্টা ধরে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় সড়কেই জোহরের নামাজ আদায় করেন কয়েক হাজার জনতা। কাদিয়ানিদেরকে বার বার কাফের বলে স্লোগান দেওয়া হয় সেই সাথে বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের অমুসলিম ঘোষনার দাবী তোলেন সংগঠনের নেতারা। একপর্যায়ে সড়কে শুয়ে স্লোগান এবং মুনাজাত করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে বিক্ষোভ, অবরোধে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, ঈমান আক্বিদা রক্ষা কমিটি, কওমি ওলামা পরিষদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, ইমাম মোয়াজ্জেন কল্যান সমিতি, খেলাফত মজলিস, পঞ্চগড় যুব সমাজ নামে সংগঠনগুলোর নেতা কর্মী ও সদস্যরা অংশ নেয়। এ সময় শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলো বাঁশ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিক্ষোভকারীরা।

এতে মহাসড়কের দুই ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যায়। বিপাকে পড়েন পথচারীরা সহ সাধারণ মানুষেরা। যাতায়াতে বাধাঁর সম্মুখীন হন অনেকে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ থেকে পৌনে ৪ টা পর্যন্ত সোয়া ৪ ঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রিয়াজ উদ্দীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম শফিকুল ইসলামের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ মিছিলে খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মুফতি আ ন ম আব্দুল করিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল হাই, খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কারী মো. আব্দুল্লাহ, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সহ্রাধিক মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন।

বিক্ষুব্ধ জনতাদের দাবী অবিলম্বে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসক বরাবরে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা বন্ধ ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠন গুলোর নেতারা।

পথচারী মুহাইমিনুল ইসলাম মঞ্জিল বলেন, আমি আমার গবাদি পশুর খাবার নিতে পঞ্চগড় বাজারে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আটকা পড়েছি। কখন সড়ক অবরোধ ছেড়ে দেয় আর কখন বাসা যাবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কারী মো আব্দুল্লাহ বলেন, প্রশাসন আমাদের আশ^স্ত করেছে কাদিয়ানীদের সালানা জলসা এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে হবে। আগামীতে তাদের কোন অনুষ্ঠান পঞ্চগড়ে হবে না। এরই প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। তবে কাদিয়ানীদের বাড়ি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ কারা করেছে আমরা জানিনা। আমাদের কোন কর্মী সেখানে যায় নি।

এদিকে করে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা বিকেল চারটার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদ নগর এলাকায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা করে দুইটি বাড়ির দুইটি স্তুপ করে রাখা জ্বালানি খড়ির ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পৌঁছ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্ষোভকারীরা এ সময় পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনার পর থেকে পঞ্চগড় পৌরসভার আহমদ নগর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবির টহল জোড়দার করা হয়েছে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকে তৎপর ছিলাম, এখনো আছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা কাদিয়ানীদের আহমদ নগড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করেছি। আমরা হামলা কারীদের সনাক্তের চেষ্টা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: