একটি সেতু বদলে দিয়েছে দ্বীপবাসীর জীবনধারা

প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৪ এএম

রাঙ্গামাটির হ্যাচারী এলাকার সুখীনীলগঞ্জ একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম হিসেবে এক সময়ে সবার নিকট পরিচিত ছিল। ১৯৫৬ সালে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হওয়ার পর গ্রামবাসীকে বিচ্ছিন্ন করায় একটি দ্বীপের মধ্যে তাদের বসবাস ছিল। আগে গ্রামবাসী দড়ি টেনে নৌকা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে আসা-যাওয়া করত। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের উপরে শহরের কালিন্দীপুর হতে হ্যাচারী এলাকায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে একটি সেতু নির্মাণ হওয়ায় তাদের জীবনধারা বদলে দিয়েছে। দড়ি টেনে নৌকা বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে তাদেরকে আর পারাপার হতে হয় না। সেতু নির্মাণে হ্যাচারী-সুখীনীলগঞ্জের মানুষের স্বপ্ন পূরণে তাদের মধ্যে খুশির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। সেতুটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাতে দেখা যায় উৎসুক জনতা।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরের হ্যাচারী এলাকার সুখীনীলগঞ্জ হ্রদ বেষ্টিত একটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম ছিল। গ্রামবাসীকে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে দড়ি টেনে নৌকায় দিয়ে কষ্ট শিকার করে স্থানীয় বাজারে যাওয়া, চিকিৎসক দেখানো, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ও অফিসিয়াল কাজে শহরে আসতে হত। অবশেষে সেতু নির্মাণ হওয়ায় নৌকায় করে তাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘব হলো। হ্যাচারী এবং সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় বর্তমানে প্রায় হাজারো মানুষের বসবাস। ওই এলাকায় রয়েছে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুলিশ লাইন,পার্বত্য জেলা পরিষদের মিনি চিড়িয়াখানা এবং মৎস্য হ্যাচারী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন এবং নির্মিত হতে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ভবন।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৭ সালে কালিন্দিপুর-হ্যাচারী-সুখী নীলগঞ্জ সংযোগ সেতুর কাজ শুরু করা হয়। ২২০ মিটার দৈর্ঘ্য বা ৭২৮ ফুট এবং ৬.৫০ মিটার প্রস্থের এই সেতু তৈরিতে ব্যয় করা হয়েছে ১২ কোটি ৬২লাখ টাকা। সেতুটি নির্মাণের ফলে শহরের ভেদভেদী-রাঙাপানি-আসামবস্তী এলাকার মানুষ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ গন্তব্যে পৌছাতে পারছে।

রাঙ্গামাটি শহরের দক্ষিণ কালিন্দীপুর এলাকার স্থানীয় বাবুল দাশ জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হ্যাচারী এলাকার মানুষ কষ্ট করে নৌকাযোগে মূল শহর এবং বিভিন্নস্থানে যাতায়াতসহ বিদ্যালয়ে যেতে হত। নৌকা পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হত। অনেক সময় নৌকা পাওয়া যেত না। এতে তাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হত। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় তাদের সহজ যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে তারা অনেক খুশি।

হ্যাচারী এলাকার সুমন জানান, রাতের বেলায় নৌকা পেতে খুবই কষ্ট হতো। এই সেতুটি তৈরী করে দেয়ায় পার্বত্য জেলা পরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ছবি: প্রতিনিধি

শহরের সুখীনীলগঞ্জ এলাকার কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী রিনি চাকমা জানান, ব্রীজটি হওয়ার আগে ভেদভেদী হয়ে বনরুপায় আসতে সময় লাগতো ৩০-৪০ মিনিট। আর এখন সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট।

হ্যাচারী এলাকার বাসিন্দা মো. জাকির জানান, এই সেতুটি নির্মিত হওয়ার ফলে কালিন্দীপুর-হ্যাচারী এলাকা-হাসপাতাল এলাকার মানুষ খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাঙাপানি ও আসামবস্তী পৌঁছাতে পারছে। তিনি আরো জানান, ব্রীজের ওপারে হাসপাতাল হওয়ায় মুমূর্ষ রোগীদের দ্রুত রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে আনা নেয়া করা যাচ্ছে। আগে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসতে তাদেও আধা ঘন্টা লাগতো।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী জানান, হ্যাচারী এলাকাটি এক সময় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ছিল। সেতুটি হওয়ার ফলে ঐ এলাকার সাথে সংযোগ স্থাপন হয়েছে। ইতিমধ্যে সেতুটির কাজ শেষ হয়েছে। অতি দ্রুত সময়ে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে। তিনি আরো জানান, হ্যাচারী-সুখীনীলগঞ্জ এলাকা যেতে হলে বিগত সময়ে প্রায় ৩-৪ কি: মি: সড়ক ঘুরে যেতে হত। এখন ব্রীজটি হওয়াতে এই এলাকার সাথে একটি যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: