পাঠদানে অবহেলা, শিক্ষার্থী কমছে বিদ্যালয়ের

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৭:২৭ পিএম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের মধ্যেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অবহেলা ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসা সহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ভেঙে পড়ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। ফলে ক্রমেই শিক্ষার্থী শূন্য হচ্ছে বিদ্যালয়টিতে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্যবস্থপনা কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা ও অনিময়ের অভিযোগ স্বীকার করেছেন খোদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছামিউল হক ও বিদ্যালয়টির জমিদাতা, অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মধ্যেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮৯ সালে এবং জাতীয়করণ হয় ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ায়িতে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিশু শ্রেণিতে ৩২ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৮জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৬, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৮জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৩১জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্নে চার জন শিক্ষক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করে। সে সময় প্রধান শিক্ষক ছিলেন মনোয়ার হোসেন। তিনি ২০১৮ সালে মারা যান। তারপর থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারি শিক্ষক মো. হায়দার আলী।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৬টি শ্রেণিতে ১৯৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন চার জন। তার মধ্যে সহকারি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বিগত একবছর দুই মাস থেকে ডিপিএড কোর্স করছেন। বাকী তিন শিক্ষকগণের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী নিয়মিত স্কুলে আসেন না। অফিসের কথা বলে বেশির ভাগ সময় কাটান ব্যক্তিগত কাজে। বাকী দুই শিক্ষক গোলাম মাসরিকুজ্জামান ও জান্নাতুল ফেরদৌস নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকলেও ছয়টি শ্রেণি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদান হচ্ছে না বিদ্যালয়টিতে।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক চারজন তার মধ্যে একজন ডিপিএড কোর্স করার বর্তমানে ছুটিতে আছেন আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা হায়দার আলী নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। বাকী দুজন সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ের পাঠদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিষয়টি খতিতে দেখছেন না বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য বৃন্দ।

বিদ্যালয়টির জমিদাতা মো. সহিজল হক জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। ক্রমেই শিক্ষার্থী কমছে বিদ্যালয় থেকে। তারা আশে পাশের বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে । আগে এই বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল।

সরেজমিনে মধ্যেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজে আছেন তিনি। সে সময় পঞ্চাশ জনের মতো শিক্ষার্থী ও দুই জন সহকারি শিক্ষককে উপস্থিত পাওয়া গেছে। কিন্ত শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখানো হয়েছে ১১৩জন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৫৭ শতক। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১৩জন, প্রথম শ্রেণিতে ২৪জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২২জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ২২জন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা শ্রেীণকক্ষ ছেড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটাছুটি করছে।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. ছামিউল হক মুঠোফোনে জানান, আমি দায়িত্ব পেয়েছি খুব কম সময় হল। ইতোমধ্যে জেনেছি স্কুলের অবস্থা ভালো না। শিক্ষক সংকট, পাঠাদানে অবহেলা, কমিটির তদারকির ঘাটতি আছে। আশা করছি সব সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠতে পারব।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী বলেন, আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাই। কাজের কারণে মাঝে মাঝে উপজেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তারপরেও পাঠদানে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। তবুও মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমাদের মধ্যে যে ভুলক্রটি আছে বলে যান তা আমরা শুধরে নেব।

কয়েকদিন আগে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা সুলতানাকে বিষয়টি অভিহিত করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। সপ্তাহ কেটে গেলেও তদন্তের কোন অগ্রগতি লক্ষকরা যায়নি। এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা সুলতানাকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তদন্ত করার সময় হয়ে ওঠেনি। তবে শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: