গাছ কাটার পর ৫ পাহাড়ে দুর্বৃত্তদের আগুন, ধ্বংস জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৩০ পিএম

কক্সবাজারের রামুতে বড় বড় গাছ কাটার পর ৫ টি সবুজ পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আগুনে পুড়েছে বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি ও পাখিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বিশাল বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকে হাতির খাদ্য ও চলাচলে বাধা সৃষ্টিসহ জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় প্রায় বিশ জন শ্রমিক পাহাড়ের গাছ কাটছেন। এ সময় কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, জেলার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন রাজারকুল রেঞ্জের ভগবান টিলার আশপাশের আনুমানিক ১০০ একরের বেশি এলাকার পাহাড়ে এই আগুন দেওয়া হয়। এতে পুড়ে গেছে অনেক গাছে। আবাস নষ্ট হয়েছে অনেক পশু পাখির।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জায়গাটি অনেক পশু-পাখির পছন্দের জায়গা। এখানে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাচীণ সহস্রধিক গাছ কেটে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় বানর, হাতি, পাখি, মৌমাছি কাটবিড়ালি, শূকরসহ নানা প্রজাতির অনেক প্রাণী আশ্রয় হারিয়েছে। অনেক প্রাণী পুড়ে মারা গেছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদশীরা জানিয়েছেন, বন কর্মকর্তারাই কখনো কখনো আগুন লাগিয়ে দেয়। আবার পাহাড়খেকোরা দখল করার কৌশল হিসেবে শীত মৌসুমে প্রথমে সবুজ পাহাড়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরে আগুন পুরো পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। দিনরাত জ্বলে আগুন নিভে যাওয়ার পর পুরো পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যায়।

সাইফুল নামের রাজারকুলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই রেঞ্জের বন কর্মকর্তারা নিলামে দিয়ে গাছগুলো কেটে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘গাছ কাঁটা বা পাহাড়ে আগুন ধরানো তো দূরের কথা, স্থানীয়রা এখানে কোনো কিছু নিয়েই কথাই বলতে পারেন না। রাজারকুল রেঞ্জের কর্মকর্তারা শ্রমিক দিয়ে গত এক মাস ধরে গাছ কাটছেন। এরপর পাহাড়ে আগুন দিয়েছেন।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে নিলামে বড় বড় গাছগুলো কেটে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন রাজারকুল রেঞ্জের বন কর্মকর্তারা। এসব পাহাড়ে সুফল প্রকল্পের অধীনে মুজিব বর্ষের বাগান করা হবে বলে নিশ্চিত করলেও কারা আগুন দিয়েছেন তা নিয়ে বন কর্মকর্তারা দেননি কোনো সদুত্তর।

গাছ কাঁটা ও পাহাড়ের আগুন লাগানোর বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে রাজারকুল রেঞ্জের কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘এলাকার লোকজন বলেছে আমরা করছি? তাইলে কি কারণে আগুন লাগাইছি তাও এলাকার লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করেন। আমি এসবের কিছু জানি না, স্থানীয় বিট কর্মকর্তা এসব জানেন।’

রাজারকুলের বিট কর্মকর্তা জহিরুল আলম বলেন, ‘এসব পাহাড়ে এখন সুফল প্রকল্পের অধীন মুজিব বর্ষের বাগান করা হবে। তবে কে বা কারা পাহাড়ে আগুন লাগিয়েছে তা জানি না। বিড়ির আগুন থেকে কাঁটা গাছের ডালপালাতেও আগুন লাগতে পারে।’

জেলা গ্রিন এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মাহমুদ বলেন, ‘গাছ কেটে আগুন দেওয়া হচ্ছে মূলত পাহাড় দখলের জন্য। এখানে এভাবে গাছ কেটে পাহাড়ে আগুন লাগাতে এর আগে আর দেখিনি। এই সব পাহাড়গুলোতে কত বিপন্ন জীবজন্তু ছিল। সব মারা পড়েছে। সরকারি টাকা মেরে দিতেই পাহাড়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পাহাড়ের গাছ কাঁটা ও আগুন লাগানোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’###

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: